করোনাকালে সৃজনশীল আয়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও টিউশনি বন্ধের এই সময়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই একইভাবে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে রীতিমতো আয় করছেন নূরানী ফেরদৌস ও সুমি মুর্মুও। এই বন্ধের মধ্যে তাঁরাও নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। নূরানী করছেন শাড়ির কাজ। আর সুমি করছেন নকশি কাঁথা। ঘরে বসেই তাঁরা আয় করার উপায় বের করে ফেলেছেন।
সম্প্রতি নগরের রামচন্দ্রপুর এলাকায় রাফা তাবাসসুমের বাসায় গিয়ে কথা হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বাবা শামছুল হক কলেজ শিক্ষক।
তাঁর শখ ছিল মেয়েকে চিকিৎসক বানাবেন। তাই এইচএসসি পাস করার পর মেডিকেল কোচিং করালেন। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হয়নি। এ নিয়ে পরিবারের সবার মন খারাপ। তবে কয়েকদিন পরেই রুয়েটে ভর্তির সুযোগ পান রাফা।
বাবা বললেন, ‘বুঝতে পারিনি যে মেয়ের ভেতরে একটা শিল্পী মন আছে। চিকিৎসক হওয়ার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ ছিল না। সৃজনশীল কাজের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। শেষ পর্যন্ত তারই জয় হয়েছে। প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিয়েই সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছে। করোনাকালের এই বন্ধের মধ্যে এখন সে তার শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
রাফার কাজের মধ্যে মনকাড়া একটা জিনিস হচ্ছে, শুধু্ই সুতা আর আঠা দিয়ে তেরি করেছেন বাবুই পাখির বাসা। তাতে বসে আছে দুটি পাখি। রং-বেরঙের সুতা দিয়ে পাখির শরীরের বিভিন্ন অংশে রং ফুটিয়ে তুলেছেন। শো–পিস হিসেবে বাসায় রাখার মতো জিনিস। একইভাবে সুতা দিয়েই তৈরি করেছেন কানের দুল ও অন্যান্য অলংকার। কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন নানা রকম অলঙ্কার। শুধু কাগজ দিয়ে তৈরি করেছেন কলাদানি, ফুলদানি ও আরও কয়েকটি জিনিস। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও রীতিমতো রং-তুলি দিয়ে থ্রি-পিস ও চাদরে নকশা করছেন। ফেসবুক পেইজের সুবাদে ঘরে বসেই এগুলো বিক্রি করছেন। রাফা বলেন, তাঁর হাতের তৈরি কোনো জিনিস আর পড়ে থাকছে না।
বছরখানেক আগে থেকে সুমি সময় পেলেই নকশি কাঁথা নিয়ে বসতেন। এখন করোনাকালে নকশি কাঁথাই তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে উঠেছে। তাঁর কাঁথা যাচ্ছে খাগড়াছড়ি থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত। খাগড়াছড়িতে পাঠিয়েছেন বাসে। আর দিনাজপুরে পাঠিয়েছেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। তবে এলাকার পরিচিত মানুষের মধ্যে তাঁর কাঁথা বেশি বিক্রি হয়েছে। এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব কাঁথা। কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি এ কাজের সঙ্গে আরও সাতজন মেয়েকে যুক্ত করেছেন।
একটি কাঁথা থেকে তাঁরা ছয় শ টাকা থেকে সাড়ে নয় শ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা এ কাজ করেন। সুমি নিজেই সবকিছুর নকশা তৈরি করেন। তিনি বলেন, শুধু কাঁথা নয়, ক্রেতার দিক থেকে সাড়া পেয়ে তিনি থ্রি-পিস, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারও তৈরি করছেন। তাঁর কাছে আট-দশ রকমের কাঁথা দেখা গেল। তাঁর বিছানার চাদর আর বালিসের কাভারগুলোর নকশাও বেশ নজরকাড়া।
সুমি বললেন, এখন যেগুলো দেখছেন, এগুলো সবই বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু ক্রেতাদের কাছে পাঠাতে হবে। সুমি জানালেন, তাঁর সহকর্মীদের হাত চালু হয়ে গেছে। এখন আরও কম সময়ে তাঁরা একটা কাজ তুলে দিতে পারবেন। আর সব মিলে ঘরের বাইরে না গিয়েই তিনি এখন সংসারটা চালিয়ে নিতে পারছেন।



কোন মন্তব্য নেই