বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দফা সংস্কার প্রস্তাব
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দফা সংস্কার প্রস্তাব
বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের কাছে নয় দফা সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ৯ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-কে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার–১৯৭২ সংশোধনের খসড়া তুলে ধরেন। চিঠির অনুলিপি অর্থ সচিব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছেও পাঠানো হয়।
🔹 সংস্কার প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য
-
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
-
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগ ও আইনি জবাবদিহি বৃদ্ধি
-
আর্থিক খাতে অনিয়ম রোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো গঠন
গভর্নর মনসুর জানান, প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক খাতে অতীতের ভুল ও অনিয়ম রোধে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হবে। অতীতে সদিচ্ছার অভাবে যে সংস্কারগুলো আটকে গিয়েছিল, এবার তা বাস্তবায়নের জন্য “সময় অনুকূলে” বলে মনে করছেন তিনি।
🔸 ৯ দফা সংস্কারের প্রধান দিকসমূহ
১️⃣ গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ
-
সাবেক অর্থ/পরিকল্পনামন্ত্রী বা সাবেক গভর্নরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে।
-
উদ্দেশ্য: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, যোগ্যতা–নির্ভর নিয়োগ নিশ্চিত করা।
২️⃣ অপসারণ প্রক্রিয়ায় আইনি সুরক্ষা
-
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত আদালত ছাড়া অপসারণ সম্ভব হবে না।
৩️⃣ পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন
-
সরকার–নিযুক্ত পরিচালক কমিয়ে ৩ → ১ জন,
-
স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সদস্য ৪ → ৬ জন করা হবে।
৪️⃣ গভর্নরের মর্যাদা বৃদ্ধি
-
গভর্নরের পদমর্যাদা হবে পূর্ণমন্ত্রীর সমান,যা ভারতের, মালয়েশিয়ার, সিঙ্গাপুরের মতো দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৫️⃣ শক্তিশালী তদারকি কাঠামো
-
হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা,
-
একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিরোধ,
-
ক্রেডিট রেটিং সংস্থার তদারকি,
-
জামানত মূল্যায়ন ও আইনি যাচাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৬️⃣ নীতি নির্ধারণে স্বাধীনতা
-
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৭️⃣ প্রশাসনিক জবাবদিহি
-
স্বজনপ্রীতি, তথ্য গোপন ও অনিয়ম রোধে আইনগত পদক্ষেপ সহজ হবে।
৮️⃣ ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা
-
ব্যাংকিং তদারকিতে তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
৯️⃣ আন্তর্জাতিক মানে স্বায়ত্তশাসন
-
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হবে।
বিশেষজ্ঞ মত
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন—
“প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তব ফল নির্ভর করবে গভর্নরের ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন মানসিকতা ও নেতৃত্বের ওপর।”
প্রেক্ষাপট
এই সংস্কার প্রস্তাব আইএমএফের ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্তের অংশ, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা জোরদারের নির্দেশনা ছিল। আইএমএফ প্রস্তাব প্রণয়নে প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়েছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ৯ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধির নতুন যুগ শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোন মন্তব্য নেই