মহান বিজয় দিবস আজ  - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

মহান বিজয় দিবস আজ 


আজ শনিবারের ভোরে পুর্ব আকাশে যে নতুন সূর্য উঠবে তা স্মরণ করিয়ে দেবে দিনটি গৌরবের, আনন্দের, বিজয়ের। বাঙালি জাতির জীবনে আজ এক আনন্দের দিন। এমনি এক দিনের প্রতীক্ষায় কেটেছে বাঙালির হাজারো বছর। বহু কাঙ্খিত সেই দিনটির দেখা মিলেছিল ইতিহাসের পাতায় রক্তিম আখরে লেখা এক সংগ্রামের শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আজ আবার এসেছে ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয়ের দিন। লাল-সবুজ পতাকা উড়ার দিন। আজকের দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের দিনটিতে আনন্দের পাশাপাশি বেদনাও বাজবে বাঙালির বুকে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি স্মরণ করবে জানা-অজানা সেসব শহীদকে। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে পেরিয়ে গেল ৪৫ বছর।
রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের গৌরবের- বাঁধভাঙ্গা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। তীব্র শোষণের কুহেলী জাল ভেদ করে একাত্তরের এই দিনটিতে প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে উঠেছিল বাংলার শিশির ভেজা মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশÑ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা।
৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ সবুজ দেশে ৪৫ বছর আগে আজকের এই দিনে উদয় হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্নে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। আজ ৪৫ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি, শেষ হয়নি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম।
তবে এবারের ডিসেম্বর আমাদের জীবনে নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। বিজয়ের দীর্ঘ সময় পরে হলেও ঘৃণ্য শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। শত ষড়যন্ত্র ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের নরঘাতক- মতিউর রহমান নিজামী, আলবদরের প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষের মনে একটা স্বস্তি এসেছে। জাতির কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন হয়েছে। পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে এক অন্যরকম গণজাগরণ ও আবহে এবার বিজয় দিবস পালন করবে গোটা জাতি। এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে এসেছে।
আজ শনিবার প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। আজ সরকারী ছুটির দিন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে কৃতজ্ঞ জনতার ঢল। বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মহান ত্যাগের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ জাতি শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দেশব্যাপী আজ সকল ভবন শীর্ষে উড্ডীন থাকবে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকল সরকারী-বেসরকারী টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, ভবঘুরে কেন্দ্রসমূহে আজ পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মিশনসমূহে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই