দেশের বৃহৎ রাবার ড্যাম
সাত বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রকল্পটি একনেকে পাশের সম্ভাবণা রয়েছে। এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে ১৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম প্রকল্প। সেচের আওতায় আসবে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি।
নতুন করে সম্ভাব্যতা যাছায় শেষে পরিকল্পনা কমিশনের চুড়ান্ত অনুমোদন মেলায় সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যেই এর নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরুপ প্রভাব, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার, বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা হয়ে পড়েছে পানি শুণ্য। এর ফলে বছরজুড়ে নদীতে পানি প্রবাহ ও সেচ কাজে নদীর পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহানন্দার নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণের দাবী উঠে। স্থানীয় দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে এসে মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ‘মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণও নদী খনন’ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রায় আড়াই বছর ধরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে প্রায় ১৫১ কোটি টাকার একটি খসড়া নকশা প্রণয়ণ করে আইডব্লিউএম। রাবারড্যাম নির্মাণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে রেহাইচর এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতুর আধা কিলোমিটার ভাটিতে স্থান নির্বাচন করে আইডব্লিউএম। ৩৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যর এই রাবার ড্যামের উজান ও ভাটিতে ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদী খনন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে উজানে ১০ কিলোমিটার ও ভাটি এলাকায় ২৬ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। এছাড়া নদীতীরবর্তী সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম।
বেশ কয়েকবার খসড়া নকশার ছোটখাটো বিষয়গুলো পরিবর্তন করে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে চুড়ান্ত নকশা প্রনয়ণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চুড়ান্ত নকশায় প্রকল্পের ব্যায় বৃদ্ধি হয়ে দাড়ায় ১৮৭ কোটি টাকা। এরপর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অনুমোদনের প্রকল্পটি পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী একাধিক কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে পরিকল্পনা কমিশন কারিগরী কমিটির মাধ্যমে নতুন করে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের জন্য পাউবো’কে নির্দেশ দেয়। গত একবছরে কারিগরী কমিটি নতুন করে সম্ভাব্যতা যাছায়ের পর কিছু কাটছাট করে ১৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি এখন একনেকে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ জানান, আগামী সপ্তাহেই প্রকল্পটি একনেকে পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিভিন্নভাবে বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। এর কারণেই এই প্রকল্পটি ৭ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, একনেকে পাশ হলে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে রাবার ড্যাম প্রকল্পের মুল কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
ছবি:প্রতিকৃতি ( এটি দিনাজপুর মোহনপুর আত্রাই রাবার ড্যাম)

কোন মন্তব্য নেই