ইন্টারনেট মিলবে পানির দামে
এশিয়া-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে (এপিআইএস) নামক একটি অন্তদেশীয় অবকাঠামো বা ইন্টারনেট মহাসড়ক তৈরীর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ইন্টারনেট এই মহাসড়ক এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরের ৩২টি দেশকে ভূ-গর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার এর মাধ্যমে সংযুক্ত করবে বলে জানা গেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশ হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলের আন্তদেশীয় টেলিযোগাযোগব্যবস্থা মূলত সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত সাবমেরিন কেবলের উপর নির্ভরশীল। এজন্য এশিয়ায় পাইকারি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের দাম ইউরোপ ও আমেরিকার গড় দামের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এপিআইএস বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবা সহজলভ্য হবে। ব্যান্ডউইথ বেচাকেনার আরও পাইকারি বাজার তৈরি হবে। এতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ে চলে আসবে। পাইকারি বাজার থাকলে ব্যান্ডউইথের আদান-প্রদানের জন্য ডেটাসেন্টার তৈরি হবে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়বস্তু বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের এ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে ভারত, চীন, জাপানসহ এ অঞ্চলের সব দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বর্তমানে এ প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
এপিআইএসের মাধ্যমে দেশের সব জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উচ্চগতির ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে। ফলে বাংলাদেশের পুরো মহাসড়ক স্মার্ট হাইওয়ে নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হবে। স্মার্ট হাইওয়ে হচ্ছে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি মহাসড়ক ব্যবস্থা যা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে স্মার্ট হাইওয়ের ধারণা বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত টোল সঠিক ভাবে সরকারের কোষাগারে যাচ্ছে কিনা তা জানা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে কতটি যানবাহন দিনে চলাচল করছে এবং সরকার কতটুকু টোল পাচ্ছে তা জানা যাবে। এমনকি মহাসড়কের কোথায় বেপরোয়া গতিতে অথবা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি ভারী চলাচল করলে তা সহজেই জানা যাবে স্মার্ট হাইওয়ে ব্যবস্থায়। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে মহাসড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব যা আগে ছিল না। সওজ নিজেদের অধীনে থাকা অপটিক নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়ে আয় করার সুযোগ থাকবে বলে জানা গেছে।
নিঃসন্দেহে এটি একটি অভিনব প্রকল্প যা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এই মহাদেশীয় ইন্টারনেট মহাসড়ক এদেশের মানুষের জীবনে আনবে আধুনিকতার ছোঁয়া।
TE

কোন মন্তব্য নেই