রোগ হলে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক দৌড়াতে হবে কেন?
প্রতিবেশী ও আশপাশের দেশগুলোর সমমানের চিকিৎসাসেবা দেয়ার সক্ষমতা অর্জনের ওপর গুরম্নত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার আন্ত্মর্জাতিক নার্সেস দিবস এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এনআইএএনইআর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটা রোগ হলে দৌড়াতে হবে সিঙ্গাপুর, দৌড়াতে হবে ব্যাংকক, ইন্ডিয়ায় দৌড়াতে হবে, কেন ?'
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারা ভালো করে দিতে পারবে, আমরা কেন পারব না ? এই প্রশ্নটা বারবার আমার মনে হয়। আমরা কেন পারি না? আমরা কেন পারব না? আমাদেরও পারতে হবে।
'সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসা সেবা আমরাও দিতে পারব; সেই অভিজ্ঞতাটা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে।'
চিকিৎসক ও সেবিকাদের সেবা দেয়ার মনোভাব নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের নার্স, ডাক্তার তাদের ভেতর এই কথাটা সব সময় থাকতে হবে, মানুষ যখন রোগী হয়ে আসে, তখন ওষুধের থেকেও ডাক্তার বা নার্সদের ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা, তাদের একটা সহানুভূতিশীল মনোভাব থেকেই অর্ধেক রোগী ভালো হয়ে যেতে পারে।'
চিকিৎসকদের আন্ত্মরিকতা আর দায়িত্ববোধের ওপর গুরম্নত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি দোষ দিই না। আমাদের লোকসংখ্যা এত বেশি। আর আমাদের ডাক্তার-নার্স সেই তুলনায় এত কম, যে এত বেশি রোগী দেখতে হয়, তাতে সব সময়, সবার মেজাজ ঠিক রাখাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।'
এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও সেবিকাদের একটু সংযত হওয়া দরকার বলেও প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্মব্য করেন।
চিকিৎসকদের সরকারি চাকরির বাইরেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের শারীরিক ও মানসিক শক্তির ওপর চাপ না দেয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সরকারি চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'সরকারি চাকরি করবেন দিনভর আর রাতের বেলায় গিয়ে প্রাইভেট করবেন, তবে তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আপনারা মনে হয় একটু হিসাব করে, যে আপনি কতটা ধারণ করতে পারেন, ততটাই করেন।'
একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে বেতন বৃদ্ধি করার কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
রোগ নিরূপণে ভুল হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ডায়াগনোসিসে কোথায় যেন বিরাট ভুল হয়ে যায়। সেজন্য স্কিলড মানুষ তৈরি করা প্রয়োজন।'
এনআইএএনইআর প্রতিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরের সময় আমি কোরিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের উন্নয়নে সহযোগিতার অনুরোধ জানাই। কোরিয়া সরকার কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-আপরেশন এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে এনআইএএনইআর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।'
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত নার্স ও চিকিৎসকের অনুপাত দুই অনুপাত এক অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।
'এরই মধ্যে নার্সদের প্রবেশ পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। সাতটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করেছি। আমরা নার্সিং পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে উন্নীত করেছি।'
এ পর্যন্ত্ম মোট ১৫ হাজার ৪৪৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ এবং পাঁচ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ জন মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত্ম পর্যায়ে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ জন নার্সকে বিদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি ও ৮৩ জন নার্সকে বিভিন্ন বিশেষায়িত বিষয়ের ওপর এমএসসি (নার্সিং) ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত্ম সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বয়সসীমা ৩৬ বছর করা হয়েছে। নার্সিং শিক্ষায় ভর্তির নূ্যনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক হতে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি-ভাতা বৃদ্ধি করে শতভাগ করা হয়েছে। তিন বছর মেয়াদী ডিপেস্নামা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সসহ বেস্নন্ডেড ওয়েব-বেইজড মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম অন সেক্সুয়াল, রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এন্ড রাইটস কোর্স চালু করা হয়েছে।
হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার ওপর গুরম্নত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এটা কিন্তু এখনো আমাদের উন্নত হয়নি। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। না হলে রোগ তো ছড়াতেই থাকবে।'
প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্যে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী তার সংসদীয় এলাকায় একটি নার্সিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুরোধ করেন। সাবের হোসেনের এই বক্তব্যে পূর্ণ সমর্থন দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তার বক্তব্যে।
সাবের হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, 'আমি তাকে অনুরোধ করব; উনি তার নিজের অর্থায়নে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন। তার জন্য অনুমতিও দিয়ে দেব, সব ব্যবস্থাও আমরা করে দেব। এখানে বেসরকারি খাতে হয়ে যাক। উনি পারবেন, এটা কোনো অসুবিধা হবে না।'
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ফলক উন্মোচন করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো.সিরাজুল হক খান এবং কেওআইসিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ুংহুন সুল বক্তব্য রাখেন।
সূত্র


কোন মন্তব্য নেই