নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান...
সমকাল পরিবারের অভিভাবক, দেশের সংবাদমাধ্যম জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামে রণাঙ্গনের অকুতোভয় মুক্তিসেনা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আর আমাদের মাঝে নেই। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাদেরকে সেই সংবাদটি জানিয়েছেন। সমকাল পরিবারের পক্ষে আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সব সদস্য, গুণগ্রাহী ও স্বজন-বন্ধুদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
কৈশোরেই গোলাম সারওয়ারের হাতেখড়ি হয়েছিল সাংবাদিকতায়। তারপর ক্রমাগত পথ চলেছেন, ক্ষুরধার লেখনীর পাশাপাশি কাঁধে তুলে নিয়েছেন সম্পাদনা ও পরিচালনার গুরুভার। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সক্রিয় ছিলেন এ পেশায়। মুক্তমনের মানুষ ছিলেন। গণতান্ত্রিক মানসিকতা ও ঔদার্যের জন্য সর্বমহলে সুপরিচিত ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজে ধারণ করতেন, যখন যে সংবাদমাধ্যমে যুক্ত ছিলেন, তার মধ্য দিয়েও তা ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট থাকতেন। দেশের জন্য, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণের জন্য ছিলেন নিবেদিত। বাংলা সংবাদপত্রের আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় যে রূপ, তা পুষ্ট করেছেন তিলে তিলে, শ্রম-ঘাম-সৃজনশীলতায়। সম্পাদকের দায়িত্বভার যখন কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তখনও বার্তাকক্ষে তাঁর উপস্থিতি ছিল সর্বক্ষণের। কাজ করেছেন নিষ্ঠা ও পরম আন্তরিকতায়। দেশের যে কোনো প্রান্তে যা কিছু ঘটুক না কেন- রাজনীতি-অর্থনীতি-খেলাধুলা-সংস্কৃতি-পরিবেশ, তাঁর তীক্ষষ্ট ও সচেতন দৃষ্টির বাইরে কোনো কিছুই থাকতে পারত না। নিজের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সদাসক্রিয় থাকার পাশাপাশি তিনি নতুন প্রজন্মের সংবাদমাধ্যম কর্মী গড়ে তোলায় সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম-সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি হিসেবে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র-সংশ্নিষ্ট সকলেই তাঁর অভাব প্রতিনিয়ত অনুভব করবে। আমরা কেবল এ সান্ত্বনাই পেতে পারি যে তিনি নিজেকে যেভাবে সংবাদমাধ্যমের জন্য নিঃশেষে উজাড় করে দিয়েছেন, সে পথ ধরে এরই মধ্যে এ পেশায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে; ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সূত্র
কোন মন্তব্য নেই