বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী


সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কৌশলগত অবস্থান আঞ্চলিক সংযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান কেন্দ্রে পরিণত করছে। বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গভাবে চলমান আটটি শতভাগ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র রয়েছে।’ গতকাল বুধবার সকালে রিয়াদে কিং সৌদ প্যালেসে সৌদি ব্যবসায়ীদের সাথে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেলে রিয়াদে নিজস্ব জায়গায় বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে কাউন্সিল অব সৌদি চেম্বারের (সিএসসি) নেতৃবৃন্দ, রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ সম্পর্কে বিশদভাবে তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘অসাধারণ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সাধারণ বিশ্বাস, সংস্কৃতি, মান এবং আকাঙ্খার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে বলে তথ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি।’ বাংলাদেশে ২৫টি প্রকল্পে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূলত কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্যও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া, পেট্রো-রাসায়নিক, প্রকৌশল ও সেবা খাতে সৌদি বিনিয়োগ আসছে।
২০১৮ সালের মার্চে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পন করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হব।’ আগামী বছরে প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ২৫ শতাংশ হবে বলে আশার কথা শোনান প্রধানমন্ত্রী।
২০০৮-০৯ সাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নয় গুণ বেড়ে ২০১৮ সালে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরকে দ্রুততর করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সবজি উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম এবং ধান উৎপাদনে চতুর্থ বৃহত্তম এবং মৎস্য উৎপাদনকারী বিশ্বে তৃতীয় উৎপাদনকারী দেশ। ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে একটি। এই খাত থেকে স্থানীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং প্রায় ১২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। ইন্টারনেটভিত্তিক পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি ব্যাপক অবদানের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় দ্রুত ও সহজে সেবা দেওয়ার জন্য আমরা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো তৈরি করেছি।
দেশে ১৫ কোটিরও বেশি সিম ব্যবহার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা নয় কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথাও বলেন তিনি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করার পর আমরা পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে এক ধাপ এগিয়ে চলেছি।
সিএসসির চেয়ারম্যান সামি এ আলাবাদি, সিএসসির মহাসচিব সৌদ এ আলমাসারি এবং বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল-মুতাইরি এসময় উপস্থিত ছিলেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিডার চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল হক, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহও উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠক :
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় দুপুরে রিয়াদের রাজকীয় প্রাসাদে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাদশাহ সালমানের এ বৈঠক হয়। পরে তারা মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ‘খুব ভালো’ আলোচনা হয়েছে বলে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
রিয়াদে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন :
এদিকে গতকাল বিকেলে সৌদি আরবের রিয়াদে নিজস্ব জমিতে বাংলাদেশের দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিয়াদের কূটনৈতিক কোয়ার্টারে ৭ হাজার ৯৫০ বর্গমিটার আয়তনের ওই প্লটে নির্মিত দূতবাস ভবনটি তিনি উদ্বোধন করেন। সেখানে একটি গাছের চারাও তিনি রোপণ করেন। এতদিন রিয়াদে ভাড়া বাড়িতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাজ চলত।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের জুনে সৌদি আরব সফরে গিয়ে নতুন দূতাবাস ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন। ওই বছর ২৫ আগস্ট চ্যান্সেরি কমপ্লেঙের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন হাজার ৮১৮ দশমিক ৬৮ বর্গমিটার আয়তনের ওই দূতাবাস ভবনের সেবা প্রত্যাশীদের অপেক্ষার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপরিসর অপেক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দূতাবাসের নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক। খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। সৌদি বাদশাহকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আসবেন। সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে মঙ্গলবার সৌদি আরব পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মক্কায় ওমরাহ পালন করবেন। সফর শেষে শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই