জালিয়াতি ঠেকাতে সতর্ক প্রশাসন
আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ¯্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ইতিমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে যেকোনো ধরনের জালিয়াতি রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোন সুযোগ নেই। অতীতের ভর্তি পরীক্ষার দিকে নজর দিলে প্রশ্ন ফাঁসের নজির পাওয়া যাবে না। যথেষ্ট গোপনীয়তা ও নিয়ম রক্ষা করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। আমরা চাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটুক। যদি ঘটে যায় সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিবো। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলে-প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন, মুদ্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে হতে হবে। এমনটা যে হবে না, সে সততা আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে আছে। দল, মত, নির্বিশেষে আমাদের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজ করেন।
উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনসহ পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া পুংখানুপুংখভাবে সম্পন্ন করা হয়। তাই এখানে এবার প্রক্সির মাধ্যমে জালিয়াতির সুযোগ নেই। পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। জালিয়াতি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সর্তকাবস্থানে থাকবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। সূক্ষ্মভাবে যদি হয়েও যায়, সেটি ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাক্ষাতকার দেয়ার সময়ও যদি ধরা পড়ে তাহলে তার ভর্তি বাতিলের নির্দেশনা দেয়া আছে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং যেকোনো ধরনের জালিয়াতি রোধ করতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক প্রফেসর প্রভাষ কুমার কর্মকার বলেন, ‘এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পাঁচটি ইউনিটের বিপরীতে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭শ ৫০জন ভর্র্তিচ্ছু অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। অনেক ভর্তিচ্ছুই জালিয়াত চক্রের দ্বারা প্রতারণার শিকার হতে পারে। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও জালিয়াতি ঠেকাতে এবং ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে।’
প্রভাষ কুমার কর্মকার আরও বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে প্রক্টর কর্তৃক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভ্রাম্যমাণ আদালত, মেডিক্যাল টিমসহ বিভিন্ন টিম কাজ করবে। এ ছাড়াও পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অভিভাবকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট) এর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ¯্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ রবিবার। এদিন সকাল ৯ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুইটি গ্রুপে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আসন প্রতি লড়বে ৬ শিক্ষার্থী। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানান বিশ^বিদ্যালয়টির ¯্নাতক ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফুল আলম।
লিখিত বক্তব্যে আশরাফুল আলম বলেন, এবার তিনটি অনুষদের অধীন মোট ১৪ টি বিভাগে ১২৩৫ টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ আসনে মোট আবেদন জমা পড়ে ৮ হাজার ৮৮৪ টি। এর মধ্যে ৭ হাজার ৪৮৮ টি প্রবেশপত্র উত্তোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এই হিসাবে আসন প্রতি ৬ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করবে।
তিনি আরও জানান, ‘ক’ ও ‘খ’ এই দুইটি গ্রুপে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ‘ক’ গ্রুপে ৩৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত ৬ হাজার ৮ শত ৮৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এবং ‘খ’ গ্রুপে ৩৫০ নম্বরের লিখিত ও ১০০ নম্বরের মুক্ত হস্ত অংকন পরীক্ষায় সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১২ টা ১০মি পর্যন্ত ৬ শত ২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।
সকল ভর্তি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘন্টা পূর্বে নিজ নিজ পরীক্ষার কক্ষে আসন গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাস রুয়েটের ওয়েবসাইট (িি.িৎঁবঃ.ধপ.নফ) এবং প্রশাসনিক ভবনের নোটিশ বোর্ডসহ এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের যে কোন ধরণের ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার হলে না আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনের মূল কপি ও এর একটি ফটোকপি এবং রুয়েটের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোডকৃত প্রবেশপত্র অবশ্যই সাথে আনতে হবে। রুয়েটের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোডকৃত প্রবেশপত্র ছাড়া কোন প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রণ করতে দেয়া হবে না।
এদিকে আরও জানানো হয়, এছাড়া সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদেরকে ভর্তি পরীক্ষার দিন হল পরিদর্শকের নিকট উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি স্বত্বা নৃগোষ্ঠীর মোড়ল, গোত্র প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত সনদের সত্যায়িত ফটোকপি অবশ্যই জমা দিতে হবে। অন্যথায় ভর্তি প্রার্থীতা বাতিল বলে গণ্য হবে। একই সাথে প্রবেশপত্র ব্যতিত কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। পরীক্ষা কক্ষে ক্যালকুলেটর ছাড়া অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস আনা নিষিদ্ধ।
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিশ^বিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, এর আগেও স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে রুয়েটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং জালিয়াতি রোধে বিশ^বিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

কোন মন্তব্য নেই