দখল-দূষণে ঢাকার নদী - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

দখল-দূষণে ঢাকার নদী


রাজধানী ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী। রাজধানীকে ঘিরে রাখা এসব নদী এক সময়ের প্রধান নগরপথ হলেও এখন দখল ও দূষণে জর্জরিত। এক যুগের কিছু বেশি সময়ে এ চার নদী তীরের অন্তত ৪৪ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলাকার জায়গা দখল হয়েছে। কোথাও বালি ফেলে ভরাট করেছে প্রভাবশালী দখলদাররা। কোথাও আবার কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে নষ্ট করছে নদীর পানিসহ আশেপাশের পরিবেশ। নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের লম্বা হাতে। দখলমুক্ত করার পর তারা আবার নদীর জায়গা দখল নিচ্ছে। 
এদিকে, নদী দখলমুক্ত করতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছে নোঙর নামের একটি সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ দাকি জানান। মানববন্ধনে নোঙরের সভাপতি সুমন শামস বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে চারটি নদী বুড়ীগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ। ক্রমেই সরু হয়ে যাচ্ছে ঢাকার চার পাশের সব নদী।
চারটি নদীর মধ্যে তুরাগের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে তুলে এটি এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে এটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। ফলে স্যাটেলাইট ইমেজে তুরাগকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চালু থাকলে এক সময় হারিয়ে যাবে তুরাগ। নোঙরের অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে, নদীগুলো দখল করে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর ও বসিলায় নদী দখল করে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো সবচেয়ে বেশি। এলাকা দুটিতে এর হার যতাক্রমে ৫০ ও ৫৬ শতাংশ। এছাড়া আব্দুল্লাপুর, গাবতলী, ডেমরা, কাঁচপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নদী দখল করে ৩৮-৪৮ শতাংশ স্থানে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গাছপালা ও কৃষি জমি হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে নন্দীপাড়ার ৭৩ শতাংশ জমি। আর পরিত্যক্ত জমি হিসাবে বেশি অংশ রয়েছে বসিলায় প্রায় ৩০ শতাংশ।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বসিলা থেকে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদীপথের দুই পাড়ই দখল করে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। কামরাঙ্গীরচর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকায় নদীটি দখল হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৭ একর। তুরাগ নদের আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে দখল হয়েছে ১২০ দশমিক ৭৯ একর। বালু নদীর ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে দখল হয়েছে। তুরাগের মোট এলাকার মধ্যে দখল হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ একর জায়গা। এছাড়া, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দখল হয়েছে মারাত্মকভাবে। নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর সঙ্গে লাগোয়া পুরো এলাকা জুড়েই শীতলক্ষ্যার পাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দখল হয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রুপের কল-কারখানা ও ইটভাটার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে নদী দখল করে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো গড়া হয়েছে কামরাঙ্গীরচর ও বসিলায়। এই অংশে ৫০ থেকে ৫৬ শতাংশ এলাকা দখল করা হয়েছে। এছাড়া আবদুল্লাহপুর, গাবতলী, ডেমরা, কাঁচপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ৩৮-৪৮ শতাংশ স্থানে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে দখল করা হয়েছে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ-এর দাবি এই হিসাব পুরনো। এর মধ্যে দখলকৃত নদীর অনেক এলাকাই দখলমুক্ত করা হয়েছে। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সূত্রে জানা গেছে, নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রায় দুই হাজার পিলার বসানো হয়েছে তুরাগ নদীতে। এর মধ্যে আদালতের রায় মেনে বসানো হয়েছে মাত্র ২৯টি। ৯৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ পিলার বসানো হয়েছে নদীর ঢালে। সঠিকভাবে রায় না মানার ফলে আমিনবাজার সেতু থেকে উত্তরা টঙ্গী সেতু পর্যন্ত ২০ কি.মি. দীর্ঘ নদীর দুই পাড়ের মোট ৫ কোটি ২৩ লাখ বর্গফুট অতি মূল্যবান জমি নদীর হাতছাড়া হয়ে গেছে। এতে করে পুরাতন ও নতুন দখলদাররা আবার নদী দখলে মেতে উঠেছে। এছাড়া, বালু নদীর ৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকাই দখলদারদের আওতায় চলে গেছে। শুকনো মৌসুমে নদীর পানিও আলকাতরার মতো কালো হয়ে যায়। বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত পাঁচ বছরে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় চ্যানেল সম্পূর্ণভাবে দখলদারিত্বের মধ্যে চলে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সীমানা পিলার উপেক্ষা করে এবং বুড়িগঙ্গার বুক চিরে দখলের রাজত্ব কায়েম করেছে একটি মহল। 


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস), স্যাটেলাইট ইমেজ ও বাস্তব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিরূপণ করা হয় নদ-নদীগুলো দখলের চিত্র। তাতে দেখা যায়, এক যুগের কিছু বেশি সময়ে ঢাকার চারপাশে দখল হয়েছে নদ-নদীগুলোর ২৫০ একরের বেশি জায়গা। পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে ঢাকার চারপাশে নদীর পাড় ধরে ১৮ মাইল এলাকা। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫২ ও নিম্নভূমি ১৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। একই সময়ে খাল ছিল ২ হাজার ৯০০ হেক্টর। ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩৫, নিম্নভূমি ৬ হাজার ১৯৮ ও নদী ১ হাজার ২ হেক্টর।
২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখলের চিত্র তুলে ধরতে নদ-নদীগুলোর পাড়ে জনবহুল আটটি এলাকার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, ঢাকার চারপাশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে তুরাগ খাল। আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে এক যুগে খালটির দখল হয়েছে ১২০ দশমিক ৭৯ একর। এর পর সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে বুড়িগঙ্গা। কামরাঙ্গীরচর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকায় এক যুগে নদীটি দখল হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৭ একর। কাঁচপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭ মাইলজুড়ে শীতলক্ষ্যা ও ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে বালু নদ দখল হয়েছে। নদ-নদী দুটি যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৮৩ ও ৮ দশমিক ৮৪ একর দখল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৬০ দশমিক ৬৩ একর খাল ও নদী দখল করা হয়েছে।
দূষণমুক্ত করার কাজে অগ্রগতি নেই
দখলের পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ এই 

কোন মন্তব্য নেই