আলোর পথের দিশারী পলান সরকার আর নেই - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

আলোর পথের দিশারী পলান সরকার আর নেই



পলান সরকার। বাড়ি রাজশাহীর বাঘার আড়ানির প্রত্যন্ত গ্রামে। কখনো হেঁটে আবার কখনো নিজের পুরাতন একটি সাইকেল নিয়ে বইয়ের ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন গ্রামে। নিজের টাকায় কেনা বই কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই পৌঁছে দিতেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। এলাকার মানুষদের আলোকিত করতেন জ্ঞানের আলোয়। কিন্তু এই মানুষটি আর  বেঁচে নেই। নিজের পাঠাগার, অসংখ্য বই আর বইপ্রেমীদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে বাঘার আড়ানির তার নিজ বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। পালান সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পলান সরকারের জন্ম ১৯২১ সালে। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন।

তবে পলান সরকার নামেই তাকে সবাই চিনতো। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। টাকা-পয়সার টানাটানির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে। তবে নিজের চেষ্টাতেই চালিয়ে যান পড়ালেখা। স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন পলান সরকার। তিনি ছিলেন বই পাগল মানুষ। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান পাবে, তাদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তার বই বিলির অভিযান। এরপরে তিনি সবাইকে বই দিতেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর নিজেই হেঁটে হেঁটে বই বিলি করতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে করেছেন এই কাজ। রাজশাহী অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বই পড়ার এক অভিনব আন্দোলন। 

এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পলান সরকার ২০১১ সালে একুশে পদক পান। পরে সরকারিভাবে পলান সরকারের বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়। সারা দেশে তাকে বহু বার সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়।

পলান সরকারের মেয়ে রোকেয়া খাতুন জানান, বই প্রেমী এই মানুষটির জীবনের শেষ প্রান্তে বসয়ের ভারে স্মৃতিশক্তি অনেকটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। বার্ধক্যের কারণে একটা সময়ে এসে কোথাও বই দিয়ে আসলে সেটি নিয়ে আসার কথা ভুলে যেতেন। হারিয়ে ফেলেছেন অনেক বই। কিন্তু তার বই বিলির নেশা ছাড়ানো যেতো না। অনেকটা গোপনে সকলের অজান্তে পাঠাগার থেকে বই নিয়ে রাতের আঁধারে কখনো কখনো বেরিয়ে পড়তেন গ্রামে। 



তিনি আরও জানান, একেবারে শেষ সময়ে এসে তার বাবা বছর দুয়েক আগেও ছেলেদের নিকট থেকে চা খাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে গ্রামের আশেপাশে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কলম উপহার দিতেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাবার সংগ্রহ করা অনেক বই এখনো আছে। রয়ে গেল তার পাঠাগার। বই পড়িয়ে আলোকিত করেছেন অনেক মানুষ। কিন্তু আজ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’ 

কোন মন্তব্য নেই