শতকোটি টাকার ছবি
রংতুলির আঁচড়ে তার তুমুল ব্যঙ্গ ও সমালোচনা। আধুনিক সমাজব্যবস্থা নিয়ে ব্যঙ্গ আর সমালোচনা রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে। তুলির আঁচড়ে আঁচড়ে এমন সব ছবি এঁকেই বিশ্বের ক্ষমতাধরদের চোখের কাঁটা যুক্তরাজ্যের শিল্পী বাঙ্কসি। তার পরও তিনি থেমে নেই। নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা এ শিল্পীরই একটি ছবি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও (৯.৯ মিলিয়ন পাউন্ড) বেশি দামে। এত দামের কারণও সেই খোঁচা। 'ডেভেলপড পার্লামেন্ট' নামে ছবিটিতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে মানুষের বদলে বসে আছে একপাল শিম্পাঞ্জি। তারাই চালাচ্ছে ইংরেজ রাজত্ব! গত বৃহস্পতিবার ছবিটি নিলামে তোলে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সোথবি। ধারণা করা হচ্ছিল, ছবিটি দেড় থেকে দুই মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হবে। কিন্তু শেষমেশ প্রত্যাশার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রি হয় ক্যানভাসে আঁকা ১৩ ফুট প্রস্থ ও ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের ছবিটি। পার্লামেন্টে শিম্পাঞ্জি ছবিটির মধ্য দিয়ে মূলত যুক্তরাজ্যের জনপ্রতিনিধিদের এক শৈল্পিক চপেটাঘাত করেছেন বাঙ্কসি।
ছবিটির নিলাম প্রতিষ্ঠান জানায়, যুক্তরাজ্যের চলমান ব্রেক্সিট ইস্যুতে আপনি যে পক্ষেই থাকুন না কেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাঙ্কসির চিত্রকর্ম এ মুহূর্তে ইস্যুটিতে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। ২০০৯ সালে আঁকা ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ব্রিস্টল মিউজিয়ামে। এতদিন পরে ব্রেক্সিট প্রাসঙ্গিকতার কারণেই এত চড়া মূল্যে বিক্রি হয়েছে ছবিটি।
টুইটারে এক পোস্টে সোথবি জানায়, ১৩ মিনিটের এক নিলামযুদ্ধে আগের চেয়ে ৯ গুণ বেশি দামে ৯৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ পাউন্ডে ডেভেলপড পার্লামেন্ট ছবিটি বিক্রি হয়েছে। তবে ছবিটি কে কিনেছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
সোথবির মুখপাত্র অ্যালেক্স ব্রাঞ্জিক বলেন, বাঙ্কসি দিনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার জন্ম দিলেন। এ শিল্পী একটি মাত্র সরল বর্ণনাত্মক ছবি দিয়ে যেন আমাদের সবচেয়ে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
দুই বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোট থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে যুক্তরাজ্যে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে কিছু করতে না পেরে এরই মধ্যে দুই দু'জন প্রধানমন্ত্রী বিদায় নিয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এ অচলাবস্থা কাটাতে পার্লামেন্ট স্থগিত করেন। তবে আদালত তা অবৈধ ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্ট চালু করেন। অন্যদিকে, বরিসের বিরোধীরা তাকে পদত্যাগের জন্য বলছেন। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পরিস্থিতি যেন বাঙ্কসির ছবিটির মতোই। সূত্র :মেট্রো ও সান নিউজের।

কোন মন্তব্য নেই