দাঁতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
'ব্যথা' শব্দটির সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। 'ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব পেইন'-এর ব্যাপকভাবে ব্যবহূত সংজ্ঞা :'ব্যথা একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি এবং মানসিক অভিজ্ঞতা, যা প্রকৃত বা সম্ভাব্য টিস্যু কিংবা তদ্রূপ ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত'।
রানী প্রথম এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের রানী হয়েও দাঁতব্যথা থেকে রেহাই পাননি। রানীর কালো দাঁত দেখে একজন জার্মান পর্যটক রিপোর্ট করেছিলেন, প্রচুর পরিমাণে চিনি খাওয়ার কারণে তার দাঁতে বাসা বেঁধেছিল ব্যাকটেরিয়া, যা দন্তক্ষয়ের অন্যতম কারণ। আর দন্তক্ষয় থেকেই ব্যথার উৎপত্তি।
দাঁত ব্যথার কারণ
দাঁতে ক্যালকুলাস (পাথর) জমে যাওয়া, যার দরুন মাড়িতে প্রদাহ হয়, একে জিঞ্জিভাইটিস বলে।
দাঁতের বাইরের আবরণ (এনামেল) ক্ষয় হয়ে যাওয়া। দাঁতে ক্যাভিটিস বা গর্ত তৈরি হওয়া। ডেন্টাল ক্যারিস থেকে দাঁতে গর্ত তৈরি হয়। এতে দাঁত শিরশির থেকে শুরু করে দাঁত ব্যথা পর্যন্ত তৈরি হয়।
অবহেলার কারণে যখন দাঁতের ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র বাড়তে বাড়তে বড় গর্তে পরিণত হয়, তখন দাঁতের ভেতরের মজ্জায় (ডেন্টাল পাল্প) ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে তখনই দাঁতে তীব্র ব্যথা, সঙ্গে কান ব্যথা, মাথাব্যথা এবং চোখ ব্যথা পর্যন্ত শুরু হয়।
আমাদের অনেকেরই ঘুমের মাঝে দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস রয়েছে, যা দাঁতের উপরের আবরণ (এনামেল) ক্ষয় করে ফেলে, এতে শিরশির করে, পরবর্তী সময়ে ব্যথায় রূপান্তরিত হয়।
ভুল ব্রাশ, ভুল ব্রাশিং টেকনিকের কারণে দাঁতের নেক রিজিওন (দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল) ক্ষয় হয়ে শিরশির ও ব্যথা করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে রোগী মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, টক খাবার, ঠাণ্ডা পানি খেতে গেলেই তীব্র শিরশির অনুভব করেন। আক্কেল দাঁত সাধারণত ১৮-২১ বছর বয়সের মধ্যে ওঠে। যদি এই সময়ের মাঝে চোয়ালে এবং সেকেন্ড মোলার দাঁত এর মাঝে কম জায়গা থাকে অথবা আক্কেল দাঁত বাঁকাভাবে উঠতে চেষ্টা করে তখন মাড়িতে তীব্র ব্যথা হয়, মাড়ি ফুলে যায়, কখনও কখনও গালও ফুলে যায়। একে ক্লিনিক্যালি পেরিকরোনাইটিস বলে।
অনেক পুরনো কোনো আঘাত, পড়ে গিয়ে দাঁতে ব্যথা পেলে দাঁতটি ধীরে ধীরে মৃত হয়ে যায়। ৮-১০ বছর পরে দাঁতের নার্ভ নষ্ট হয়ে শিকড়ের নিচে ইনফেকশন হয়ে রেডিকুলার সিস্ট তৈরি করে। তখন দাঁতের গোড়ার দিকে ব্যথা হয়। অনেক ধরনের টিউমার যেমন- অ্যামিলোব্লস্টোমা, ওডোন্টজেনিক কেরাটেসিস্ট, পিন্ডবর্গ টিউমারসহ মুখগহ্বরের ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
তামাক, জর্দা, গুল, ধারালো দাঁত, ভাঙা দাঁতের শিকড় মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ। সেকেন্ডারি ক্যান্সারে পরে ব্যথা অনুভূত হয়।
সচেতনতা
-দাঁতের ক্যালকুলাস পরিস্কারের জন্য বছরে কমপক্ষে একবার স্কেলিং করান।
-সকালে নাশতার পরে এবং রাতে ঘুমানের আগে ব্রাশ করবেন।
-দাঁতের যে কোনো ধরনের ব্যথায় অবহেলা না করে অতি দ্রুত চিকিৎসা নিন।
-ক্যাভিটিস পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গেই ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হোন। খুব ছোট ক্যাভিটি হলে সহজেই ফিলিং করে চিকিৎসা সম্ভব।
-বছরে কমপক্ষে দু'বার আপনার দাঁত ও মখগহ্বর ডেন্টিস্টের কাছে পরীক্ষা (রুটিন চেকআপ) করান।
[সিনিয়র লেকচারার, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ. ঢাকা]
কোন মন্তব্য নেই