আল্লাহর পথে দাওয়াত
আল্লাহর পথে আহ্বান একটি মহান ইবাদত ও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। এ কাজটিই পৃথিবীর সব নবী-রাসুল করেছেন যুগে যুগে। শেষ নবীর অবর্তমানে এ গুরুদায়িত্ব বর্তেছে তার উম্মতের ওপর। এ কাজ জরুরি সবার জন্য এবং এ দায়িত্ব সবার। মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- আর যেন তোমাদের মধ্য হতে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম' (আল ইমরান :১০৪)।
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া সর্বাধিক মহান নৈকট্য অর্জনকারী বিষয়। এ জন্যই এই কাজটি সম্পাদন করেছেন সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব তথা নবী-রাসুলরা। আর এটিই এই দাওয়াতের ফজিলতের প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। কারণ আমরা সমগ্র মানুষকে জীবনের প্রকৃত দায়িত্বের দিকে আহ্বান করছি। আর তা হলো, যথাযথভাবে আল্লাহতায়ালার দাসত্ব করা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন :আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদত করার জন্য (আয্যারিয়াত :৫৬)। এ জন্যই আল্লাহর বিনিময়স্বরূপ সুনির্দিষ্ট করেছেন মহান বিনিময়, অফুরন্ত প্রতিদান। রাসুল (সা.) বলেন :আল্লাহ যদি তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকেও হেদায়েত দান করেন, তবে এটিই তোমার জন্য লাল উট অপেক্ষা উত্তম (বুখারি : ৪২১০)। এই মহান পুরস্কার এ জন্যই যে, এ কাজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত হলো, আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার মৌলিক নীতি জেনে নেওয়া এবং এই উম্মতের পূর্বসূরিদের তরিকার অনুসরণ করা, যাদের প্রধান হলেন ইসলামের প্রথম দাঈ মুহাম্মদ (সা.)। মহান আল্লাহ বলেন-হে নবী, আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও প্রদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে প্রেরণ করেছি (আহযাব :৪৫-৪৬)।
কারণ নবী ও তার অনুসারীদের আল্লাহর পথে দাওয়াত ছিল জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। মহান আল্লাহ বলেন :হে রাসুল, আপনি বলে দিন, এটিই আমার পথ; আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে দাওয়াত দান করি। আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই (ইউসুফ :১০৮)। মহান আল্লাহ আরও বলেন :'তুমি তোমার রবের দিকে আহ্বান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না' (কাসাস : ৮৭)। তাই দাঈ ইলাল্লাহর দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর দিকে আহ্বানের এ গুরুদায়িত্ব পালনকালে হিকমতের পথ অবলম্বন করা এবং দাওয়াত কর্ম হিকমত দিয়েই শুরু করা, এর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন- 'তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন' (নাহল :১২৫)। দাওয়াতের সঠিক পন্থা হলো দাঈকে প্রজ্ঞাপূর্ণ, দূরদর্শী হয়ে দাওয়াতদানে প্রবৃত্ত হওয়া। তাড়াহুড়ো ও বল প্রয়োগের মানসিকতা ত্যাগ করে হিকমতের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া। কোরআন ও হাদিসের প্রভাবপূর্ণ উপদেশ বাণীর মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করা, যা দাওয়াত পেশকৃত ব্যক্তির হৃদয়-মনে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং হক গ্রহণে প্রেরণাদানে খুবই পারঙ্গম। দাঈর জন্য আবশ্যক গুণাবলির মধ্যে এটিও একটি, লোকদের যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দেবে, নিজের মধ্যে আগে তা বাস্তবায়ন করবে। তাকে সে বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। এমন হওয়া চলবে না যে, অপরকে হকের দাওয়াত দিল, ভালো কাজ করতে বলল আর নিজে তা থেকে দূরে সরে রইল। অথবা কোনো বিষয়ে অন্যকে নিষেধ করল, এর পর নিজে তাতে জড়িয়ে পড়ল। এটা অবশ্যই ক্ষতিকর। আল্লাহতায়ালা বলেন :'হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না, তা তোমরা বলো কেন? তোমরা যা করো না, তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক (সাফফ :২-৩)। আল্লাহতায়ালা ইহুদিদের এ মর্মে ভর্ৎসনা করেছেন যে, তারা মানুষকে কল্যাণের কথা বলে অথচ নিজেরা নিজেদের ভুলে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন- 'তবে কি তোমরা লোকদের সৎকাজে আদেশ করছ এবং তোমাদের নিজেদের ভুলে যাচ্ছ। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো; তবে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছ না?' (বাকারা :৪৪)। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওয়াজিব হলো সে তার জ্ঞান অনুযায়ী দাওয়াত দেবে। আর যে বিষয়ে তার জানা নেই, সে বিষয়ে অযথা দায়িত্বভার নিতে যাবে না এবং বিনিময়ের জন্য লালায়িত হবে না। মহান আল্লাহ বলেন :'বলো, আমি তোমাদের কাছে এই দাওয়াতের ওপর কোনো বিনিময় চাই না এবং আমি লৌকিকতা প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই (ছদ :৮৬)। আর যদি আমরা দাওয়াতকে শুধু বিজ্ঞ আলেমদের মাঝেই সীমিত করে দিই আর অন্যদের জন্য এ দাওয়াত নাজায়েজ বলি, তাহলে আমাদের কাছে অতি অল্প সংখ্যক দাঈ টিকবে, যা উল্লেখযোগ্য নয়। তখন বাতিল ও গর্হিত কাজ প্রচার ও প্রসারতা লাভ করবে।
অনুরূপভাবে দাঈদের কর্তব্য হলো ওলামায়ে দ্বীন থেকে উপকৃত হওয়া। তাদের মতামত, বই-পুস্তক প্রভৃতি থেকে আলো গ্রহণ করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে আপনার রাস্তায় উত্তমভাবে দাওয়াত দেওয়ার তৌফিক দিন। আমাদের সবাইকে দ্বীনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ বুঝ দান করুন। দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা সহজ করে দিন। আমাদের হেদায়েতপ্রাপ্ত ও হেদায়েতের পথপ্রদর্শক-নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করুন। নিশ্চয় আপনি বড় দয়ালু, মহান দাতা।
প্রভাষক, চাটখিল কামিল (এমএ) মাদ্রাসা
[email protected]
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া সর্বাধিক মহান নৈকট্য অর্জনকারী বিষয়। এ জন্যই এই কাজটি সম্পাদন করেছেন সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব তথা নবী-রাসুলরা। আর এটিই এই দাওয়াতের ফজিলতের প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। কারণ আমরা সমগ্র মানুষকে জীবনের প্রকৃত দায়িত্বের দিকে আহ্বান করছি। আর তা হলো, যথাযথভাবে আল্লাহতায়ালার দাসত্ব করা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন :আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদত করার জন্য (আয্যারিয়াত :৫৬)। এ জন্যই আল্লাহর বিনিময়স্বরূপ সুনির্দিষ্ট করেছেন মহান বিনিময়, অফুরন্ত প্রতিদান। রাসুল (সা.) বলেন :আল্লাহ যদি তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকেও হেদায়েত দান করেন, তবে এটিই তোমার জন্য লাল উট অপেক্ষা উত্তম (বুখারি : ৪২১০)। এই মহান পুরস্কার এ জন্যই যে, এ কাজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত হলো, আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার মৌলিক নীতি জেনে নেওয়া এবং এই উম্মতের পূর্বসূরিদের তরিকার অনুসরণ করা, যাদের প্রধান হলেন ইসলামের প্রথম দাঈ মুহাম্মদ (সা.)। মহান আল্লাহ বলেন-হে নবী, আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও প্রদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে প্রেরণ করেছি (আহযাব :৪৫-৪৬)।
কারণ নবী ও তার অনুসারীদের আল্লাহর পথে দাওয়াত ছিল জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। মহান আল্লাহ বলেন :হে রাসুল, আপনি বলে দিন, এটিই আমার পথ; আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে দাওয়াত দান করি। আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই (ইউসুফ :১০৮)। মহান আল্লাহ আরও বলেন :'তুমি তোমার রবের দিকে আহ্বান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না' (কাসাস : ৮৭)। তাই দাঈ ইলাল্লাহর দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর দিকে আহ্বানের এ গুরুদায়িত্ব পালনকালে হিকমতের পথ অবলম্বন করা এবং দাওয়াত কর্ম হিকমত দিয়েই শুরু করা, এর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন- 'তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন' (নাহল :১২৫)। দাওয়াতের সঠিক পন্থা হলো দাঈকে প্রজ্ঞাপূর্ণ, দূরদর্শী হয়ে দাওয়াতদানে প্রবৃত্ত হওয়া। তাড়াহুড়ো ও বল প্রয়োগের মানসিকতা ত্যাগ করে হিকমতের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া। কোরআন ও হাদিসের প্রভাবপূর্ণ উপদেশ বাণীর মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করা, যা দাওয়াত পেশকৃত ব্যক্তির হৃদয়-মনে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং হক গ্রহণে প্রেরণাদানে খুবই পারঙ্গম। দাঈর জন্য আবশ্যক গুণাবলির মধ্যে এটিও একটি, লোকদের যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দেবে, নিজের মধ্যে আগে তা বাস্তবায়ন করবে। তাকে সে বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। এমন হওয়া চলবে না যে, অপরকে হকের দাওয়াত দিল, ভালো কাজ করতে বলল আর নিজে তা থেকে দূরে সরে রইল। অথবা কোনো বিষয়ে অন্যকে নিষেধ করল, এর পর নিজে তাতে জড়িয়ে পড়ল। এটা অবশ্যই ক্ষতিকর। আল্লাহতায়ালা বলেন :'হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না, তা তোমরা বলো কেন? তোমরা যা করো না, তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক (সাফফ :২-৩)। আল্লাহতায়ালা ইহুদিদের এ মর্মে ভর্ৎসনা করেছেন যে, তারা মানুষকে কল্যাণের কথা বলে অথচ নিজেরা নিজেদের ভুলে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন- 'তবে কি তোমরা লোকদের সৎকাজে আদেশ করছ এবং তোমাদের নিজেদের ভুলে যাচ্ছ। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো; তবে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছ না?' (বাকারা :৪৪)। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওয়াজিব হলো সে তার জ্ঞান অনুযায়ী দাওয়াত দেবে। আর যে বিষয়ে তার জানা নেই, সে বিষয়ে অযথা দায়িত্বভার নিতে যাবে না এবং বিনিময়ের জন্য লালায়িত হবে না। মহান আল্লাহ বলেন :'বলো, আমি তোমাদের কাছে এই দাওয়াতের ওপর কোনো বিনিময় চাই না এবং আমি লৌকিকতা প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই (ছদ :৮৬)। আর যদি আমরা দাওয়াতকে শুধু বিজ্ঞ আলেমদের মাঝেই সীমিত করে দিই আর অন্যদের জন্য এ দাওয়াত নাজায়েজ বলি, তাহলে আমাদের কাছে অতি অল্প সংখ্যক দাঈ টিকবে, যা উল্লেখযোগ্য নয়। তখন বাতিল ও গর্হিত কাজ প্রচার ও প্রসারতা লাভ করবে।
অনুরূপভাবে দাঈদের কর্তব্য হলো ওলামায়ে দ্বীন থেকে উপকৃত হওয়া। তাদের মতামত, বই-পুস্তক প্রভৃতি থেকে আলো গ্রহণ করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে আপনার রাস্তায় উত্তমভাবে দাওয়াত দেওয়ার তৌফিক দিন। আমাদের সবাইকে দ্বীনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ বুঝ দান করুন। দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা সহজ করে দিন। আমাদের হেদায়েতপ্রাপ্ত ও হেদায়েতের পথপ্রদর্শক-নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করুন। নিশ্চয় আপনি বড় দয়ালু, মহান দাতা।
প্রভাষক, চাটখিল কামিল (এমএ) মাদ্রাসা
[email protected]
কোন মন্তব্য নেই