প্রশাসন কতটুকু পচেছে? - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

প্রশাসন কতটুকু পচেছে?














একের পর এক প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা, অনৈতিক কার্যক্রম এবং ঔদ্ধত্য আচরণ জনগণকে উদ্বিগ্ন করছে। প্রশাসন অর্থাৎ সরকারী কর্মচারীরা জনগণের বেতনভুক্ত কর্মচারী, জনগণের টাকায় তাঁদের বেতন হয়। এক কথায় তারা জনগণের চাকর। অথচ কিছু কিছু সরকারী কর্মকর্তার আচরণ এতটাই বেসামাল হয়ে উঠেছে যা নিয়ে সকলে আতঙ্কিত। সাধারণ মানুষ মনে করছে, আমাদের প্রশাসনে পচন ধরেছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, এরপর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এসময় প্রশাসনের একটি বড় অংশ পেশাগত দক্ষতা আর মেধার বদলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের হয়ে পদোন্নতিসহ নানা রকম লাভজনক পোস্টিং বাগিয়ে নিচ্ছেন। প্রশাসনের মেধার চর্চা একবারে তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে এবং কে কত আওয়ামী লীগার তা প্রমাণের উদ্ভট এবং অবাস্তব প্রতিযোগিতা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশাসনের আজকের এই পচনের জন্য রাজনীতিকরণই সবথেকে বেশি দায়ী। কিছুদিন আগে জামালপুরের ডিসির অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সম্প্রতি কুড়িগ্রামে ডিসির সাংবাদিকের উপর ডাকাতের মতো করে আক্রমণ কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে যশোরের এসি ল্যান্ডের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ জনগনকে বিস্মিত করেছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে যারা চলাফেরা করেন এবং প্রশাসনের খোঁজ খবর রাখেন, তাঁরা জানেন , জামালপুর কিংবা কুড়িগ্রামের ডিসি বা যশোরের এসিল্যান্ডের এই আচরণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের ভেতর রাজনীতিকরণ, দলবাজি এবং বিভিন্ন লবিং-গ্রুপের প্রভাবে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড বা শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে।

প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মনে করেন তাঁরা আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার। এমনকি কোন কোন সচিবের কাছে গেলে তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকেও হিতোপদেশ দেন। কিভাবে দল চলতে পারে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেন। অনেকেই প্রশাসনে তার অর্পিত দায়িত্বর চেয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগী। বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র বেশ কিছুদিন ধরেই জাঁকিয়ে বসেছে। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর রাজনৈতিক নেতাদের ওপর আমলারা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। আর এ কারণেই কিছু সুবিধাবাদী আমলা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। প্রশাসনের নিয়ম শৃঙ্খলা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ভুলে রাজনৈতিক কর্মীদের মতো আচরণ করছেন।

গত এক দশক ধরে আমলারা জনসেবক হবার বদলে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার মানসিকতা পোষণ করছেন। জানা যায়, বিভিন্ন পোস্টিং, পদবীর ক্ষেত্রেও দক্ষতা প্রমাণের তুলনায় কে কত আওয়ামী লীগ সেটা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ার অভিযোগ এসেছে। আর এ কারণে শুধু মাঠ প্রশাসন নয়, পুরো প্রশাসনের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জনগণের প্রতি দায়িত্বপালনের যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে দেশের আমলাতন্ত্র।

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ক্রমশই একটা চাটুকার এবং দলবাজ আমলাতন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। যেটা দেশের সুশাসন ও জনসেবার পরিপন্থী এবং সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটা তারই বহিঃপ্রকাশ।

সুত্র : বাংলা ইনসাইডার

কোন মন্তব্য নেই