চট্টগ্রাম বন্দরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পন্যবাহি রিফার কনটেইনার রাখার জায়গা নেই
চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে রিফার কনটেইনারের স্তুপ ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়েছে। হিমায়িত বা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পন্যবাহী বিশেষায়িত এসব কনটেইনারের ডেলিভারিতে ধীরগতিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে গলদঘর্ম চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সমুদ্রগামী জাহাজ হতে নামার অপেক্ষায় থাকা আরো ৬ শতাধিক বিশেষায়িত এই কনটেইনার নামানোর জায়গা নেই বন্দর ইয়ার্ডে। অভিযোগ রয়েছে আমদানিকারকরা বন্দর ইয়ার্ডকে অনেকটা পন্যগুদামে পরিণত করেছেন। উদ্বুত পরিস্থিতিতে আগামী ১৭ মে হতে স্বাভাবিক ভাড়ার উপর ৪গুণ হারে পেনাল রেন্ট আরোপের হুশিয়ারী দিয়েছে বন্দর ট্রাফিক বিভাগ।
শিপিং সংশ্লিস্টদের মতে, রিফার কনটেইনার বলতে গেলে বৃহদাকৃতির কনটেইনাররূপী ফ্রিজ যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পন্য যেমন ফলমূল, আদা, গোশত, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, শাকসব্জী, ক্ষেত্র বিশেষে পিয়াজ, দুগ্ধ এবং অ-খাদ্য পণ্য যেমন ফুল, ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম পরিবহন করতে ব্যবহৃত হয়। এসব কনটেইনারে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় পন্য পরিবাহিত হয় বিধায় সংশ্লিষ্ট পন্যের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা থাকে।
সুত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের সুরক্ষিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এসব কনটেইনার মাত্র ৯মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ৭শ’র কাছাকাছি বৈদ্যুতিক ফি প্রদানের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়। ফলে অনেক আমদানিকারক বন্দর ইয়ার্ডে পন্য ফেলে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রনেরও অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আদার বাজার অস্থির করা সিন্ডিকেটও বন্দরে পন্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুল্ক কর্তৃপক্ষ কনটেইনার বোঝাই আদা নিলামে বিক্রিরও উদ্যোগ নিয়েছিল।
বন্দর সুত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে বিশেষায়িত এসব কনটেইনার রাখার জন্য ডেডিকেটেড বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন হয়। আর বন্দর ইয়ার্ডে রিফার কনটেইনার সংরক্ষনের জন্য বৈদ্যুতিক প্লাগ পয়েন্ট রয়েছে ১৬শ’র সামান্য বেশি। আর ইয়ার্ডে রিফার কনটেইনার সংরক্ষন ক্যাপাসিটি রয়েছে ২৬শ’ টিইইউএস। প্লাগ পয়েন্টের চাইতে ইয়ার্ডে রিফার কনটেইনারের স্তুপ বেড়ে গেলে প্লাগ পয়েন্ট ব্যবহারে রেশনিং করা হয়। ৩/৪ ঘন্টা পরপর প্লাগ পয়েন্ট পরিবর্তন করে অন্য কনটেইনারে দেয়া হয়। করোনা পরিস্থিতিতে রিফার কনটেইনারের স্তুপ বেড়ে গেলে এভাবেই রেশনিং পদ্ধতিতে কোন রকমে চলে আসছিল। এরমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা পরিস্থিতির প্রণোদনা হিসেবে গত ২৭ মার্চ হতে আগামী ১৬মে পর্যন্ত সবধরনের কনটেইনারের উপর শতভাগ স্টোররেন্ট মওকুপের ঘোষনা দেয়। কিন্তু তাতেও নন ফ্রিজার পন্যবাহি কনটেইনার ডেলিভারি বাড়লেও রিফার কনটেইনার ডেলিভারিতে ধীরগতি দেখা দেয়।
বন্দর সুত্র জানায়, ইতোমধ্যে বন্দর ইয়ার্ডে একহাজার রিফার পয়েন্ট বাড়িয়ে ২৬শ’ করা হয়। কিন্তু রিফার কনটেইনার স্বাভাবিক গতিতে ডেলিভারি না হওয়ায় ইয়ার্ডে রিফার কনটেইনারের বর্ধিত ধারণ ক্ষমতাও ছাড়িয়েছে। তাছাড়া জাহাজ হতে নামার অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৬শতাধিক রিফার কনটেইনার। ইয়ার্ডে বিশেষায়িত এসব কনটেইনার রাখার স্থানাভাবের কারনে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসেও ধীরগতি চলছে। ফলে জাহাজের সেইলিং (বন্দর ত্যাগ) ও টার্ন এরাউন্ড টাইম (গড় অবস্থানকাল) উভয়ই বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কর্মকান্ড নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে অনতিবিলম্বে এসব বিশেষায়িত কনটেইনার দ্রুত ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সাথে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা করে রিফার কনটেইনারের ডেলিভারি না বাড়লে ১৭মে হতে আমদানিকৃত রিফার এফসিএল (একক আমদানিকারকের পন্যবাহী) কনটেইনারের উপর রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং চিটাগং পোর্ট (কনটেইনার এন্ড কার্গো) ,২০০১ এর ১৬০ ধারার আলোকে স্বাভাবিক ভাড়ার উপর চারগুন হারে স্টোররেন্ট আরোপে বন্দর কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক নয়াদিগন্তকে জানিয়েছেন, রেশনিং করে পরিস্থিতি এতদিন সামাল দেয়া হচ্ছিল। এখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়াতে পেনাল রেন্টের চিন্তা করতে হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই