চুরি ঠেকাতে রেলের তেল রেশনিং প্রথা বাতিলের প্রস্তাব - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

চুরি ঠেকাতে রেলের তেল রেশনিং প্রথা বাতিলের প্রস্তাব












ট্রেনের প্রতিটি ইঞ্জিনে অন্তত এক সপ্তাহের তেল সংরক্ষণ করে রাখা হয়। ট্রেনের চালকেরা জানান, এই তেলের পরিমাণ ২৭০০ থেকে ২৮০০ লিটার হয়ে থাকে। সেখান থেকে যাত্রা শুরুর পূর্বে চালককে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া আসার জন্য তেলের পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়।

ফিরে এসে তেলের হিসাব করে যদি চালককে বেধে দেয়া তেলের বেশি খরচ হয়, তাহলে মাস শেষে চালকের বেতন থেকে সেই পরিমাণ অর্থ কেটে নেয়া হয়।

আর নির্দিষ্ট করে দেয়া তেলের যদি কম খরচ হয় তাহলে বেঁচে যাওয়া তেলের জন্য কিছুই দেয়া হয় না চালককে। ইঞ্জিনের তেলের এ পদ্ধতিকে রেশনিং প্রথা বলে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ রেশনিং প্রথা চলে আসছে।

কমলাপুর স্টেশনের লোকোশেডের কয়েকজন জানান, রেশনিং প্রথার কারণে তেল চুরির ঘটনা ঘটে। তাদের দাবি, যে পরিমাণ তেল চালককে খরচের জন্য বেধে দেয়া হয়, তার কম খরচ হওয়া তেলের বিনিময়ে যেহেতু চালককে কিছুই দেয়া হয় না ওই তেলটুকুই চালকরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করে।


রেশনিং প্রথার পক্ষে বিপক্ষে নানা রকম মত দিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। অনেকেই বলছেন, রেশনিং প্রথা বাতিল করে তেলের হিসাব শূন্য থেকে কাউন্ট করা উচিত। আর ইঞ্জিন যাত্রার শুরুতে গন্তব্যে যেতে ও ফিরে আসতে যতটুকু তেল প্রয়োজন ততটুকু তেল দিলে আর চুরির ঘটবে না।

তবে অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন, একটি ইঞ্জিনকে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যখন তখন পাঠানো হয়ে থাকে। ফলে রেশনিং প্রথা রাখা দরকার। আবার পথিমধ্যে যদি অন্য কোনো ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তাহলে লাইনে আরেকটি ট্রেনকে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অতিরিক্ত তেল ভরে রাখা দরকার।

তারা বলেন, অনেক স্টেশনে তেল ভরার ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া ইঞ্জিনকে যে কোনো সময় বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো হয়ে থাকে। তাছাড়া দুর্ঘটনার কারণে অতিরিক্ত তেলের খরচ হয়। রেশনিং প্রথা না থাকলে ট্রেনের টাইম শিডিউল যেমন ঠিক রাখা সম্ভব না, তেমনি বিপর্যস্ত হবে যাত্রীসেবা।


লকডাউনের কারণে রেলের প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল। এ সুযোগে বেড়েছে তেল চুরির ঘটনা। সম্প্রতি রেলের পশ্চিমাঞ্চলে কয়েকজন কর্মকর্তা ও ট্রেন চালককে তেল চুরির অপরাধে বরখাস্ত করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রেলের তেল চুরির হিড়িকের এ সময় তেল চুরি ঠেকাতে কৌশল হিসেবে কিছু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা নিজের ফেরিফাইড ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। সময় নিউজের পাঠকদের উদ্দেশে তা হুবহু তুলে দেয়া হলোছ

‘আমার মতে তেলের রেশনিং প্রথা উঠিয়ে দেয়া উচিৎ। তেলের হিসেব পাই পাই করে নেয়ার সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। লোকো শেড হতে কত লিটার তেল, কবে কখন, কোন লোকোতে কত লিটার তেল ভরা হল, সেটার হিসেব এবং তথ্য যেমন অটোমেডেট বা ডিজিটালাইজ হবে, তেমনি প্রত্যেক লোকোতে জিপিএস ফুয়েল ট্র‍্যাকার থাকবে।






লোকোশেড থেকে কত লিটার তেল ভরা হল ইঞ্জিনে, লোকোর ফুয়েল ট্যাংকে কত লিটার গেল, তা মিলিয়ে নেয়া যাবে রিমোটলি। অর্থাৎ যে কোন কর্মকর্তা এসব কিছু তার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে মনিটর করতে পারবেন।

এলএম যাত্রা শেষে কত লিটার তেল সহ লোকো বুঝিয়ে দিলেন, তার হিসেবও থাকবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। সেই সাথে থাকবে কত লিটার তেল কেনা হয়েছে, তার বিস্তারিত হিসেব।

তখন থাকবে না ফুয়েল রেশনিং। এলএম সাহেবরা নিশ্চিন্তে নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন। থাকবে না তেল বাঁচাবার মানসিকতা, থাকবে না তেল চুরি।

ট্রেন যত জোরে চলবে, তত তেল খরচ হয় তত বেশি। কোঠার বাইরে বেশি তেল খরচ হলে তা এলএম সাহেবদের বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। ট্রেন যত স্লো চলবে, তত তেল বেঁচে যাবে।

তেল চুরি করার জন্য যেমন ট্রেন স্লো চালিয়ে তেল সেইভ করতে হবে, তেমন তেল যাতে বেশি খরচ না হয়, তার জন্য নির্ধারিত গতির চেয়ে কম চালাতে হয়। কারণ বেশি খরচ হলেই, তার দাম পকেট থেকে দিতে হয়। এই রেশনিং প্রথা একটা দুষ্ট চক্রের সৃষ্টি করেছে। পরিবর্তন আনতে হবে। আনা সম্ভব। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন সবাই।’






কোন মন্তব্য নেই