আয়করে ছাড়, কমতে পারে করপোরেট কর
করোনার মহামরির মধ্যে জনবান্ধব একটি বাজেট দিতে চায় সরকার। জানা গেছে, আগামী বাজেটে নতুন কর আরোপ করা হচ্ছে না। জনগণকে স্বস্তি দিতে এবং বেসরকারি খাত চাঙ্গা করতে আয়করে ছাড় ও করপোরেট কর কমানোসহ নানা প্রণোদনার প্রস্তাব থাকছে। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জানা যায়, করোনাকালে সাধারণ মানুষের স্বস্তি দিতে ব্যক্তিশ্রেণির আয়ে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে তাদের জন্য নির্ধারিত করহারও কমানোর প্রস্তাব থাকছে। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বছরে আড়াই লাখ টাকা। বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা করা হতে পারে। একই সঙ্গে কর হারেও আসছে পরিবর্তন।
জানা যায়, প্রান্তিক তথা সাধারণ করদাতাদের করহার কমাবে সরকার। বর্তমান প্রান্তিক করদাতাদের করহার হচ্ছে ১০ শতাংশ। সূত্র বলেছে, আসন্ন বাজেটে এই শ্রেণির করহার বিদ্যমানের চেয়ে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে। তবে অন্যান্য স্তরের করহার অপরিবর্তিত থাকছে। বর্তমানে ব্যক্তির আয় অনুপাতে পাঁচ স্তরে বা ধাপে আয়কর আদায় করা হয়। বার্ষিক আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর করহার শূন্য। আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হলে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ।
আয়কর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হারে যারা কর দেন তাদের সংখ্যাই বেশি। এরা প্রান্তিক করদাতা হিসেবে পরিচিত। জানা যায়, আসন্ন বাজেটে এই শ্রেণির করদাতাদের করহার হ্রাস করে বাকি স্তরে অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে শহরভেদে নূ্যনতম করহার আগের মতোই থাকছে।
করপোরেট করে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার ৩৫ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে এই স্তরের করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। আয়ের প্রকৃতিভেদে করপোরেট করহারের স্তরও পাঁচটি। সর্বোচ্চ হার ৪৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ। সূত্র বলেছে, আগামী বাজেটে শুধু একটি স্তরে করহার কমিয়ে অন্যসব ধাপে অপরিবর্তিত থাকছে। এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের লক্ষ্য এখন রাজস্ব আহরণ নয়। ক্ষতি পোষানো। অর্থনীতির চাকা সচল রাখা। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই করছাড় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নানামুখী সংস্কার করে আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকছে।
সূত্র বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যারা মাস্ক, পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ও মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করবে, তাদের নির্ধারিত হারে কর ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে এবার তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। বর্তমানে ভ্যাটের যেসব হার বহাল রয়েছে, তা অপরিবর্তিত থাকছে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। আমদানি পর্যায়ে খুব একটা হাত দেবে না সরকার। চলতি বাজেটে কিছু খাত ছাড়া বেশির ভাগ পণ্যে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আরোপ করা হয়। এই কর আদায়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া করোনার কারণে আমদানি তলানিতে পৌঁছছে। এসব বিবেচনা করে আগাম কর প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা চলছে। এ ছড়া অপ্রয়োজনীয় বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে।
আসছে অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা মাত্র দেড় শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ভ্যাটে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, আয়কর ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ও আমদানি শুল্ক্কে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আসবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে গত রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কর বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে ১১ মে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যায়, বৈঠকে এনবির্আের পক্ষ থেকে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি পর্যায়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাকালে দেশের জনগণ কষ্টের মধ্যে আছেন। অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। কাজেই, এমন কোনো কিছু করা যাবে না, যাতে জনগণের ওপর চাপ বাড়ে। এ জন্য জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কোন মন্তব্য নেই