আস্থাহীনতায় এখনো বাসে চড়ছেন না অনেক যাত্রী - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

আস্থাহীনতায় এখনো বাসে চড়ছেন না অনেক যাত্রী

 

আস্থাহীনতায় গণপরিবহনে চড়তে পারছেন না সাধারণ মানুষ। একান্তই বিশেষ প্রয়োজনে কিছুসংখ্যক যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করলেও বেশির ভাগই বিকল্প ব্যবস্থায় চলাচল করছেন। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সুযোগ পেলেই দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করাসহ নানা কারনে গণপরিবহন ব্যবহারে তারা এখনো আস্থা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে রাজধানীতে চলাচলরত সিটি সার্ভিস বাস নিয়ে তাদের অভিযোগ বেশি। যেসব যাত্রী অফিসে বা অন্য কাজে যাতায়াতের জন্য লোকাল বা সিটিং সার্ভিস বাসে চড়তেন এখন তাদের বেশির ভাগই অতিরিক্ত ব্যয়ে বিকল্প যানবাহনে চড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এতে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল বা কেউ কেউ প্রাইভেট কারো ব্যবহার করছেন।


করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দিকে দেশব্যাপী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুইজনের আসনের এক সিটে একজন করে যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। ওই সময় যেহেতু ৪০ সিটের একটি বাসে ২০ জন যাত্রী চড়তে পারবে তাই ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। সবশেষে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বর্ধিত ভাড়া বন্ধ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি সিটে যাত্রী ওঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সিটে যাত্রী উঠবে; কিন্তু কোনো অবস্থাতে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।


বর্ধিত ভাড়া বন্ধ করে চলাচল করলেও গত ১০ দিনে তেমন যাত্রী পাচ্ছে না বাসগুলো। অফিস টাইমে কিছু যাত্রী হলেও সারা দিন বাসে তেমন কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না বলে বাস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। তারা বলছে, আগে বাসের জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করত; কিন্তু এখন মিনিটের পর মিনিট অপেক্ষা করেও বাস পূর্ণ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে নারী যাত্রীরা কোনোভাবেই বাসে উঠতে চাইছে না।



 

বৃহস্পতিবার সকালে ব্যস্ততম মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাস স্টপে গিয়ে দেখা যায় কিছুসংখ্যক যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে তার চেয়ে বেশি যাত্রী অপেক্ষা করছেন রিকশা-অটোরিকশার জন্য। কেউ কেউ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যানবাহন কল করে অপেক্ষা করছেন। আহসান হাবিব নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, তিনি মতিঝিলের একটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। থাকেন পশ্চিম শেওড়াপাড়ায়। করোনার আগে প্রতিদিনই সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোতে অফিসে যাওয়া-আসা করতেন; কিন্তু করোনার পর অফিস খুললেও তিনি আর বাসে চড়তে সাহস পাচ্ছেন না। প্রথম কয়েক দিন চড়ার পর তিনি দেখতে পান বাসগুলোতে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাসের বেশির ভাগ যাত্রী মাস্ক ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও হয় মুখ খোলা রাখছে অথবা নাক খোলা রাখছে। কেউ কানের সাথে ঝুলিয়ে রাখছে। হাঁচি-কাশি এলে কেউই মুখ ঢাকার চেষ্টাটুকুও করছেন না। অনেকে তো বুঝতে পারছেন না এটা করোনাকাল, তার কাছ থেকে অন্যের ক্ষতি হতে পারে। সব যেন গা ছাড়া অবস্থায় চলছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হলেও তিনি সিএনজি অটোরিকশায় করে যাওয়া-আসা করছেন।


মতিঝিলের একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহেজাবিন মানহা বলেন, নারীদের জন্য গণপরিবহনে চড়া সব সময় কষ্টের। তবুও তিনি সিটিং সার্ভিসের বাসে চলাচল করতেন; কিন্তু করোনার পর এখনো তিনি বাসে চড়েননি। তিনি বলেন, যাত্রীরা নামার পর, নতুন যাত্রী ওঠার আগে বাসের আসনগুলো জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত; কিন্তু বাসগুলো তা করছে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া সিটিতে চালিত বাসের যাত্রীরা কোনো একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে নামেন না। রাস্তার মাঝে নেমে যান, আবার রাস্তার মাঝ থেকে নতুন কেউ ওঠেন। কোন যাত্রীর শারীরিক অবস্থা কী তা জানারও কোনো উপায় নেই। সব কিছু চিন্তা করে এখনো বাসের না চড়ার কথা ভাবছেন তিনি।


বিকল্প পরিবহনের চালক আবদুর রহমান বলেন, যেখানে বাস পূর্ণ করার জন্য যাত্রীই পাওয়া যায় না, সেখানে দাঁড়িয়ে কিভাবে যাত্রী নেবো। তবে অফিস টাইমে দুই-একটা ট্রিপে যাত্রী পাওয়া যায়। বাকি সময় অর্ধেকের বেশি সিট খালি থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরও করোনার ভয় আছে। অসুস্থতা বা মৃত্যুর ভয় কে না পায়। যতটুকু সম্ভব হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করে থাকি। তবে যাত্রীরা যদি সচেতন না হন তাহলে আমাদের একার পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই