যে শহরের সব চিকিৎসক পালিয়ে গেছেন, একজন ছাড়া! - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

যে শহরের সব চিকিৎসক পালিয়ে গেছেন, একজন ছাড়া!


 দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইয়েমেন বিপর্যস্ত। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশটির সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে যখন করোনাভাইরাস মরামারির চূড়ান্ত তাণ্ডব চলছিল, সেই সময়ে ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার শহর আদেনে চালু ছিল মাত্র একটি মাত্র হাসপাতাল।


কোভিড-১৯-এর ভয়ে এবং বলতে গেলে কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামই (পিপিই) না থাকায় শুধু একজন ছাড়া সব চিকিৎসকই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন চিকিৎসা সেবা থেকে। শহর থেকে সরে পড়েছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে। 


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্বেচ্ছায় ওই শহরে থেকে যাওয়া সেই একমাত্র চিকিৎসকের নাম ডা. জোহা।


ইয়েমেনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ছয় মাস পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিবিসি দেশটিতে পৌঁছায় এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে। 



বিবিসি'র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ডা. জোহার সেই সাহসী গল্প।


করোনাভাইরাস বাস্তবতা নিয়ে আদেন শহরের অধিবাসী আবদুল করিম বলেন, আমি খেয়াল করলাম, আমার বাবা বেশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। ভাবলাম, হয়তো স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-জ্বরের কারণেই।


বাবা আলীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন করিম। এক্সরে করে জানানো হলো, আলীর বুকে বাজে রকমের ইনফেকশন হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ইনটেনশিভ কেয়ারের (আইসিইউ) দরকার ছিল। কিন্তু চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দিলেন, মুমূর্ষু ওই বৃদ্ধকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে এ ধরনের রোগী ভর্তি করানো হয় না। 


বাবাকে নিয়ে শহরের পাঁচটি হাসপাতালে ছুটেছিলেন করিম। কিন্তু চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি কেউই। করোনাভাইরাসের ভয় ও পিপিই না থাকায় বেশির ভাগ চিকিৎসকই শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আর হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পালাননি শুধু ডা. জোহা।


বাবার চিকিৎসকের খোঁজে এক সপ্তাহ অসহায় সময় কাটানোর পর ডা. জোহার সন্ধান পান করিম।


জোহা বলেন, তিনি (করিম) বললেন, তার বাবা মারা যাচ্ছেন, আমি যেন তাকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দিই। আমি বললাম, এখানে কোনো শয্যা নেই। অক্সিজেন নেই।


করিমের বাবার অবস্থা শোচনীয় ছিল। তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। 


ড. জোহা বলেন, করিম চিৎকার করছিলেন, 'আমার বাবা মারা যাচ্ছে, ডাক্তার, প্লিজ!’ ওই রোগীকে হাসপাতালে ঢুকিয়ে মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া ছাড়া আমার আর উপায় ছিল না।


এর ১৫ মিনিট পর অবশ্য মারা যান আলী। তবু লড়াই চালিয়ে যান ডা. জোহা। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে নিজেকে প্রস্তুত রাখেন।

কোন মন্তব্য নেই