কোটি কোটি টাকা নিয়ে সমিতির মালিক উধাও, উল্টো গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা
এ ঘটনায় এলাকার শত শত নিরীহ ও দরিদ্র গ্রাহক তাদের তিলে তিলে জমানো কষ্টার্জিত টাকার শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গ্রাহকদের জমা অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে হালিমের বাড়িতে গিয়ে কয়েকটি গরু নিয়ে যান গত কয়েকদিন আগে। ওই ঘটনায় চারজন গ্রাহকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন হালিমের বাবা শুকুর আলী। এতে সাদেক আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে ধামরাই উপজেলার দেপাশাই গ্রামে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে 'রোজ সমবায় সমিতি' নামে একটি সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হয়, যার নম্বর ৫৬৫। এর সভাপতি হন কালামপুর বাজারের মুদি দোকানদার ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মোড়ারচর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে মইনুল ইসলাম। তিনি তার ভাগ্নে দেপাশাই গ্রামের আবদুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার কালামপুর, দেপাশাই, ভালুম, মোড়ারচর, কাশিপুর, বরাটিয়া, বাথুলী ও শৈলানসহ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে আমানতের ওপর অধিক লাভ দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।
একপর্যায়ে দেপাশাই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের পাঁচ লাখ ৫০ হাজার, আবদুস সাত্তারের চার লাখ, শাহজাহানের এক লাখ, শরিফুল ও তাঁর ভাই-বোনের ১৬ লাখ, ভানু বেগমের দুই লাখ, মাইনুদ্দিনের দুই লাখ, আবদুল মান্নানের এক লাখ, বজলুর রহমান ও তাঁর ভাইয়ের ২৮ লাখ টাকাসহ কয়েক কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন চতুর মামা-ভাগ্নে।
আমানতের ওপর কয়েক মাস লাভ দিয়ে মানুষের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জনের একপর্যায়ে তারা নিজেরা হয়ে যান কোটিপতি। তারা কালামপুর বাজারে তিনতলা আলিশান ভবন, আইঙ্গনে জমি, ঢাকায় ফ্ল্যাট,গাড়ি বাড়ির মালিক হয়ে যান।
গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে নানা হুমকি দিয়ে হঠাৎ এক রাতের মধ্যে উধাও হয়ে যান মামা-ভাগ্নে। ওই ঘটনায় প্রায় ১০ জন গ্রাহক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মামা-ভাগ্নের বিরুদ্ধে।
এদিকে টাকার শোক সইতে না পেরে ওই সমিতির কয়েকজন গ্রাহক এক সপ্তাহ আগে আবদুল হালিমের ছয়টি গরু নিয়ে যান। এতে চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন হালিমের বাবা শুকুর আলী।
ভুক্তভোগী বজলুর রহমান বলেন, আমার এবং আমার ভাইয়ের ২৮ লাখ টাকা স্ট্যাম্পে লিখিত স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণ করেছে রোজ সমবায় সমিতির অংশীদার আবদুল হালিম। টাকা চাইলেই আমাদের মামলা হামলার ভয় দেখানো হতো। আমাদের টাকা আত্মসাৎ করে হালিম ও তার মামা মইনুল গা ঢাকা দিলেও হালিমের বাবা শুকুর আলী উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত টাকাও আত্মসাৎ করল। আবার আমাদের বিরুদ্ধেই উল্টো থানায় মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন হালিমের বাবা শুকুর আলী।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পারভীন আশরাফী বলেন, 'রোজ সমবায় সমিতির সভাপতি মইনুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে হালিম গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কোন মন্তব্য নেই