রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাঁচ সমস্যা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাঁচ সমস্যা


প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাকে এক ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ’ (আইআরডি)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি অর্থবছরে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’-তে সংস্থার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে ‘আইআরডি’। এছাড়াও চারটি সমস্যা রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্ত:কর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।

জানা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের (জাতীয় রাজস্ব রোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত) যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ বাস্তবতায় রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইআরডি। এদিকে সরকারের নীতি নির্ধারকরা বরাবরই বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ‘উচ্চাভিলাষী নয়’ কিংবা ‘আদায়যোগ্য’ বলে দাবি করে থাকেন। একইসঙ্গে তারা এমন যুক্তিও দেন যে, সরকারের ব্যয় নির্বাহ করা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক।

বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত তিনটি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৩২ হাজার ২০২ কোটি টাকা (এনবিআর ২,২৫,০০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৭,২০২ কোটি টাকা) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা (এনবিআর ১,৮৭,১০৩ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৭,২২৩ কোটি টাকা)।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (এনবিআর ২,৮০,০০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৯,৬০০ কোটি টাকা) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা (এনবিআর ২,১৮,৬১৬ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৭,৩৪২ কোটি টাকা)। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোতি বাজেটে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা (এনবিআর ৩,০০,৫০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ১২,৫৬৭ কোটি টাকা)। অর্থ বিভাগের হিসাবে, এর বিপরীতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত: চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের (এনবিআর নিয়ন্ত্রিত ও এনবিআর-বহির্ভূত) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সমাপ্ত অর্থবছরের চেয়ে আরও ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা অধিক রাজস্ব আদায় করতে হবে।

এদিকে ‘কর্ম সম্পাদন চুক্তি’-তে আইআরডি’র পক্ষ থেকে গত তিনটি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, এর সঙ্গে বাজেট ডকুমেন্ট ও অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের হিসাবের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৬০ হাজার ২৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

অন্যদিকে বাজেট উপাত্ত ও অর্থ বিভাগের হিসাবে, আলোচ্য তিনটি অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায় হয়েছে যথাক্রমেÑ ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা; ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হলেও ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’-তে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে । তবে কর ব্যবস্থাপনার অটোমেশন এবং সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ লাখ ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও অটোমেটেড সিস্টেমে ৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়েরও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে সংস্থার হিসাবে, কর-জিডিপি অনুপাত বেড়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৫। সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭০। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে এটি বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ।

কোন মন্তব্য নেই