ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড


ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃতু্যদন্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। খসড়া অনুযায়ী, ছয় মাস বা ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে হবে। বিচারক বদলি হলেও মামলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই (১৮০ দিন) বিচার শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে দন্ডিত ব্যক্তিকে জরিমানাও গুনতে হবে। অর্থদন্ড হিসেবে আদালত যেটা নির্ধারণ করবে, দন্ডিত ব্যক্তির বর্তমান সম্পদ থেকে সেটা সংকুলান না হলে, ভবিষ্যৎ উপার্জন থেকে আহরণ করা হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সচিব বলেন, 'আইনের ধারাটি সংশোধনের ফলে ধর্ষণ কমে আসবে বলে মনে করে মন্ত্রিসভা। সংসদ চালু না থাকায় এটি রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশটি জারি হবে।' একই কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, 'আজ মঙ্গলবার এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।' অর্থাৎ অধ্যাদেশ হওয়ার পর থেকেই এটি আইনে পরিণত হবে। ব্রিফিং-সংশোধিত আইনটির খুটিনাটি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে ধর্ষণসহ যে কোনো মামলার বিচার কাজ এখন ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইবু্যনাল এমন সিদ্ধান্ত আছে। তদন্ত বিচার পদ্ধতি সবকিছুই শেষ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। তার মধ্যে বিচারক যদি বদলি হয়ে যান সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিচারক যে অবস্থায় রেখে যাবেন সেখান থেকে মামলা চালিয়ে যেতে হবে। 'আইন বিভাগ থেকে আইনি যাচাই (ভেটিং) শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিয়েছে, ফলে রাষ্ট্রপতি এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করবেন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে 'যাবজ্জীবন থেকে মৃতু্যদন্ড' করলে ধর্ষণ কমবে এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'যারা ক্রাইম করে তারা এখন অন্তত দুইবার চিন্তা করবে যে, এটাতে মৃতু্যদন্ড আছে। এখন আর যাবজ্জীবন কারাদন্ড নয়। ৬ মাসে রায় নিশ্চিত করা হবে। এসব বিষয় সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্যাম্পেইন (প্রচার) হচ্ছে। ফলে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'এই আইনে বলা হয়েছে দোষী ব্যক্তির উপর আরোপিত অর্থদন্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য করিতে পারিবে এবং অর্থদন্ড বা ক্ষতিপূরণের অর্থ দন্ডিত ব্যক্তির নিকট থেকে বা তার সম্পদ থেকে আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ থেকে আদায় করা যাইবে।' এটা ভিকটিমের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো দিক। রায়ে এটা যাতে আরেকটু ভালোভাবে আসে, সেটা চিন্তা করা হবে বলে জানান তিনি। দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের কারণে নয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের পাশাপাশি মৃতু্যদন্ডের বিধান যুক্ত করতে আইনের সংশোধনী নিয়ে আসে। মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে একমত হয়েই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ডের বিধান রেখে খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সচিব বলেন, সংশোধনের ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারাটি পরিবর্তন হবে। 'যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।' এটার জায়গা এখন 'নারী বা শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, তাই ধর্ষণের অপরাধের জন্য মৃতু্যদন্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন'। অর্থাৎ 'যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড' শব্দগুলোর পরিবর্তে 'মৃতু্যদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড' শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। এছাড়াও ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ), ২০ (৭) উপধারা সংশোধন করা হয়েছে। ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখম হলে কম্পাউন্ড (আপোস) করা যাবে। ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় কোনো কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'ডেফিনেশনের (সংজ্ঞা) বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।' আন্দোলনের কারণে আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, শুধু আন্দোলনের কারণে নয়, আইন পরিবর্তনের আরও অনেক প্রেক্ষাপট রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ও বাস্তবতা সবকিছু মিলেই এটা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনেক দেশের আইন যাচাই-বাচাই করে দেখেছে এ আইনের পরিবর্তন-পরিমার্জন প্রয়োজন। আর সরকারের মধ্য থেকেও এটার পক্ষে একটা প্রচারণা ছিল। মানুষের সচেতনতা কাজ করেছে।' সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রাজধানীসহ সারাদেশে অব্যাহত আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠন, বাম ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন। আন্দোলনকারী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড করার দাবি জানান।


কোন মন্তব্য নেই