পারটেক্স জুটের সম্পদ কিনলেন আকিজ গ্রুপের শেখ বশির - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

পারটেক্স জুটের সম্পদ কিনলেন আকিজ গ্রুপের শেখ বশির

 

স্বতন্ত্র উদ্যোগ হিসেবে গত বছরই ৭২৫ কোটি টাকায় জনতা-সাদাত জুট মিল কিনেছিলেন আকিজ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার শেখ বশির উদ্দিন। এবার পারটেক্স জুট মিলের জমি, মেশিন ও শ্রম সম্পদ কিনেছেন তিনি। মূলত জনতা-সাদাত জুট মিলের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য থেকেই এ ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ৩০০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থের বিনিময়ে পারটেক্স জুট মিলের সম্পদ কিনে নিয়েছে জনতা-সাদাত জুট মিল।


এ ক্রয় কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা পারটেক্স জুট মিল বা কোম্পানিটি কিনিনি। আমরা সম্পদ কিনেছি। জনতা-সাদাতের ক্ষেত্রে গোটা প্রতিষ্ঠানকে কেনা হয়েছিল। কিন্তু পারটেক্স জুট মিলের ক্ষেত্রে আমরা শুধু সম্পদ কিনেছি, দায় নয়। অর্থাৎ কেনা হয়েছে শুধু জমি, মেশিন ও শ্রম সম্পদ। অধিগ্রহণের মাধ্যমে এসবের মালিক এখন জনতা-সাদাত।


অধিগ্রহণের আর্থিক পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তা প্রকাশ করতে চাননি শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, জুট মিলটিতে সাড়ে তিন হাজার মানুষ কাজ করেন। প্রায় ১৭৫ বিঘা জমির ওপরে কারখানা। দৈনিক ১২০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটিতে লুম আছে ২৫০টি। এখানে তৈরি হচ্ছে কার্পেট ব্যাকিং ইয়ার্ন ও পাটের বস্তা। এ কারখানাটির মাধ্যমে জনতা-সাদাত জুট মিলের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেল। কিছু আধুনিকায়নও হবে কারখানাটির। তবে তার বেশি প্রয়োজন নেই, কারণ কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে ২০১৪ সালে।


জানা গেছে, পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধাররা অনেক চেষ্টা করেও পারটেক্স জুট মিলকে লাভজনক করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে ক্রেতা খুঁজতে শুরু করে পাটকলটির মালিকপক্ষ। এদিকে পাট খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সদ্য ক্রয়কৃত জনতা-সাদাত জুট মিলের সম্প্রসারণ চাইছিলেন শেখ বশির উদ্দিন। দুই গ্রুপের মূল উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলাপচারিতা ও সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে ৩০০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থের বিনিময়ে এ ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।


সম্প্রতি লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ অবস্থার মধ্যেও পাটপণ্যের বৈশ্বিক বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে বেসরকারি খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যার অন্যতম আকিজ জুট মিলস লিমিটেড। এক সময় মাত্র ৩০০ শ্রমিক ও ১০ টন উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে যাত্রা করা আকিজ জুট মিলস এখন বিশ্বের বৃহত্তম পাট সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। পাট সুতার মোট বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।


বিশ্ববাজারে পাট সুতার বার্ষিক চাহিদা চার থেকে সাড়ে চার লাখ টন। এর মধ্যে আকিজ জুট মিলস সরবরাহ করছে এক লাখ টনেরও বেশি। গত অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটি পাটজাত দ্রব্যে রেকর্ড পরিমাণ রফতানি আয় করেছে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির রফতানি আয় প্রথমবারের মতো ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।


আকিজ গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত ভালো পাটের সিংহভাগই প্রক্রিয়াজাত করে সুতায় রূপান্তর করছে আকিজ জুট মিলস। বিশ্বের প্রায় ৪০টির মতো দেশে পাটপণ্য রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। আকিজ জুট মিলসে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।



পাশাপাশি জুট মিলের ওপর পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল আরো ১৫ হাজারেরও বেশি পরিবার। প্রতিষ্ঠানটিকে কাঁচা পাট সরবরাহ করছেন দেশের প্রায় আড়াই লাখ কৃষক।


উৎপাদন সক্ষমতা ও সরবরাহে দেশে পাট খাতে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে আকিজ জুট মিলস। মাত্র দুটি ইউনিট নিয়ে যাত্রা করা আকিজ জুট মিলসের অধীনে এখন সাতটি কারখানা উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনতা-সাদাত জুট মিলস এবং করিম জুট মিলসও পাট সুতা ও পণ্য উৎপাদন করছে। তবে বাজারের এক-তৃতীয়াংশই এখন আকিজের দখলে। আকিজ জুট মিলসে প্রতিদিন প্রায় ৩৯০ টন সুতা উৎপাদন হচ্ছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জনতা জুট মিলসের উৎপাদন ১০০ টনের কাছাকাছি ও করিম জুট মিলসের ১০০ টনের নিচে।


বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে আকিজ জুট মিলসের রফতানি ১০ কোটি ডলার ছাড়ালেও দ্বিতীয় স্থানে থাকা জনতা-সাদাত জুট মিলসের রফতানি ছিল সাড়ে ৩ কোটি ডলারের কাছাকাছি। অন্যদিকে করিম জুট মিলসের রফতানি ছিল ৩ কোটি ডলারের কাছাকাছি। দেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্যের অনেক চাহিদা আছে বিদেশে। আর এ সুযোগ যখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হাতছাড়া করছে তখন তা কাজে লাগাচ্ছে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড। পাট সুতা উৎপাদনকারী ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটি টানা ১৫ বছর ধরে জাতীয় রফতানি ট্রফি (স্বর্ণ) অর্জন করে দেশের শীর্ষস্থান দখল করে আসছে। এছাড়া ২০১৮-২০১৯ কর বছরে পাট শ্রেণীতে সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ট্যাক্স কার্ড সম্মাননা-২০১৯ পেয়েছে দেশের স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটি।


শেখ বশির উদ্দিন বলেন, জনতা-সাদাত জুট মিলের মালিকানার মাধ্যমে পাট খাতে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব অল্প সময়ের। কিন্তু পাট খাতে আকিজ গ্রুপের অভিজ্ঞতা অনেক পুরনো। প্রবেশের পর আমার মনে হয়েছে এ খাতটি কার্যকারিতার চেয়ে আবেগ দিয়েই পরিচালিত হয় বেশি। কৃষি থেকে শুরু করে পাট এবং পাটজাত পণ্যের ভোক্তা পর্যন্ত যে সুযোগ বাজারে রয়েছে, সেখানে অনেকগুলো ডট আছে। এ ডটগুলোর সংযোগ ঘটানো হয়নি সঠিকভাবে। ফলে খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা বিকশিত হয়নি। এ খাতটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিকশিত হওয়া প্রয়োজন।


তিনি আরো বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আমার মনে হয়েছে এ খাতের উন্নয়ন সম্ভাবনার মাত্রা অনেক বেশি ওপরে। বর্তমানে পাটজাত পণ্যের বেশির ভাগটাই র্যাপিং ম্যাটেরিয়াল। একটি পাটের বস্তার ক্ষেত্রে দেখা যাবে প্লাস্টিক বস্তার চেয়ে সেটা অপ্রয়োজনীয় ধরনের ভারী। আর এ পাট খাতের উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে শুধু রাষ্ট্রীয় সহায়তা কাজে লাগিয়ে। কৃষিপণ্য বলে এতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা লাগবেই। কিন্তু শিল্পকেও সঠিক সৃজনশীলতার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ শুধু নিয়ন্ত্রণমূলক সহায়তা কাজে লাগিয়ে এ শিল্পে বিপ্লব সম্ভব হবে না। আমার ছয় মাসের অভিজ্ঞতা বলে সম্ভাবনা অপার। এ খাতের ভ্যালু চেইনের প্রতি ক্ষেত্রেই অদক্ষতা আছে।

কোন মন্তব্য নেই