দুর্বলমানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

দুর্বলমানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি


করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম ঢেউ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে আশাবাদী ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে সেই আশা অনেকটাই যেন ম্লান হতে বসেছে। এ অবস্থায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন, দুর্বলমানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত চতুর্থ পর্যায়ের জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।


জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর মাত্র ২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি। মাঝারিমানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৩১ শতাংশ। আর দুর্বলমানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী।


কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপর সানেম ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গতকাল এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে এ জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।


ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান।


জরিপের ফলাফল উপস্থাপনে ড. সেলিম রায়হান জরিপ সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩৬টি জেলার মোট ৫০৩টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর এ জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৩টি উৎপাদন খাতের এবং ২৫০টি সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবা খাতের মধ্যে ছিল পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত। গত ৬ থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।


জরিপের উত্তরের ওপর ভিত্তি করে সানেম তিনটি সূচকের মাধ্যমে তাদের গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেছে। প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (বার্ষিক), প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) এবং বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (পরবর্তী তিন মাস)। এর মধ্যে পিবিএসআইয়ের (বার্ষিক) মাধ্যমে ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চের সঙ্গে ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের সঙ্গে ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিসিআই চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় ২০২১ সালের মে-জুনে ব্যবসায়ীদের আস্থা কেমন, তা প্রকাশ করেছে। প্রতিটি সূচকই শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৫০-এর বেশি মানে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ৫০-এর নিচে মানে অবস্থার অবনতি হচ্ছে।


জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন সময়কালে বার্ষিক প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্সের মান ছিল ২৬ দশমিক ৪৪, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ২৩। ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫০। ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৫৫। এ সময়কালে ব্যবসার খরচ-সংক্রান্ত সূচকের সবচেয়ে অবনতি হয়েছে।


প্রেজেন্ট বার্ষিক বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্সকে খাতভিত্তিক বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়কালে আর্থিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, টেক্সটাইল ও খুচরা ব্যবসা তুলনামূলকভাবে অন্য খাতের চেয়ে ভালো করেছে। পিছিয়ে আছে পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, চামড়া শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্প ও রিয়েল এস্টেট খাত।


২০২০ সালের এপ্রিল-জুন সময়কালে ত্রৈমাসিক প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্সের মান ছিল ২৯ দশমিক ৪৮, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪৭ দশমিক ৯৬। আর ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে ছিল ৪৮ দশমিক ৮৩। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে হয়েছে ৫১ দশমিক ৩৮।


সর্বশেষ জরিপে অংশ নেয়া ২২ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন। ৬৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাননি। আর ৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেন না। আর জরিপ করা বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ, মাঝারি ৩০ শতাংশ এবং ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র ও ছোট প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে।


জরিপের ফলাফল প্রকাশের এ অনুষ্ঠানে ড. সেলিম রায়হান চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, তৈরি পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও রিয়েল এস্টেট খাতে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এ খাতগুলোতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদহার কমানো, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠনের কথা বলেন। একই সঙ্গে এসএমই খাতে ঋণ ও প্রণোদনাপ্রাপ্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।


অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে বড় ধসের পর আমরা সার্বিক পুনরুদ্ধার দেখতে পেয়েছি। দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগ পর্যন্ত ধারাবাহিক পুনরুদ্ধার দেখা গেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার সবার জন্য এক রকম হয়নি। আর্থিক, পোশাক খাত, আইসিটি খাত ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ভালো করেছে।

কোন মন্তব্য নেই