১০ ব্যাংকের এমডিকে বগুড়ার ডিসির চিঠি নিয়ে প্রশ্ন
করোনাভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে সরকারের প্রণোদনার আওতায় কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে (সিএমএসএমই) ঋণ বিতরণ বাড়াতে ১০টি ব্যাংকের এমডিকে চিঠি দিয়েছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। সরাসরি এমডিদের চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি ডিসির এখতিয়ারবহির্ভূত মনে করছে। তবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মনে করছেন, এতে নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাকে চিঠি দিয়ে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর পরামর্শ দেবে।
প্রণোদনার আওতায় সিএমএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ তদারকির জন্য প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে প্রধান করে গত বছরের জুন মাসে কমিটি গঠন করে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটি গঠনের বিষয়ে অবহিত করার পর গত জানুয়ারিতে প্রতি জেলায় একটি করে লিড ব্যাংক নির্বাচন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমিটিকে সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তখন ব্যাংকগুলোকে দিকনির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বগুড়ায় লিড ব্যাংক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংক।
জানা গেছে, বগুড়া জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা, বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট, আইএফআইসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, ঢাকা, পূবালী, ট্রাস্ট, সাউথইস্ট ও এনআরবি ব্যাংকের এমডিরা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের 'গোপনীয় শাখা' থেকে এসব ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো চিঠিতে মো. জিয়াউল হক নিজেই স্বাক্ষর করেন। সেখানে গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত সভার উল্লেখ করে লক্ষ্যমাত্রা ও ঋণ বিতরণের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, 'প্রধানমন্ত্রীর ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে আপনাদের বগুড়া শাখা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির এবং মাঝারি শিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে যথেষ্ট উদ্যোগী ও কর্মতৎপর নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা প্রশাসক এসএমই ঋণ বিতরণ তদারকি কমিটির প্রধান হলেও লিড ব্যাংকের মাধ্যমে যে কোনো অভিযোগ বা মূল্যায়ন বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে পারেন। সে আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকের এমডিদের নির্দেশনা দেবে। তবে সরাসরি ব্যাংকের এমডিদের চিঠি পাঠানো এখতিয়ারবহির্ভূত ও অনৈতিক চর্চা। কয়েকটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপত্তি জানানো হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে অবহিত নয়।
এ বিষয়ে দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, জেলা প্রশাসকের এভাবে এমডিদের চিঠি দেওয়া অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তারা মৌখিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছেন।
জানতে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক সমকালকে বলেন, 'লক্ষ্যমাত্রার আলোকে প্রতিটি ব্যাংক যেন ঋণ বিতরণ করে, সেজন্য জেলা এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি এ চিঠি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংককেও বিষয়টি অবহিত করেছেন। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় ব্যাংক। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত এসএমই ঋণ বিতরণ তদারকি কমিটি নির্বাচিত লিড ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানীয় শাখাগুলোকে নিয়ে বৈঠক করে অগ্রগতি জানতে পারে। এমনকি অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করলেও লিড ব্যাংকের সহযোগিতায় তা আয়োজন করতে হবে। হয়রানিমুক্তভাবে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য তিনি সেখানে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিতে পারেন। যোগ্যতা থাকার পরও কেউ ঋণ না পেলে তা নিয়েও বলতে পারেন। তবে কোনোভাবেই সরাসরি এমডিকে চিঠি দিতে পারেন না। আগামীতে এমন কোনো বিষয়ে এমডিদের চিঠি না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর জন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সমকাল
কোন মন্তব্য নেই