নতুন নিয়মে এমপিওভুক্তি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

নতুন নিয়মে এমপিওভুক্তি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ



বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ১৫ জুলাই বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ৩৮ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে সনদপ্রাপ্তদের জাতীয় মেধাতালিকা থেকে আবেদনের সুযোগ দিয়ে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ গত ৩০ মার্চ। বিজ্ঞপ্তিটিতে ৫৪ হাজার ৩০৪টি পদের জন্য বিদ্যমান জনবলকাঠামো ২০১৮ অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ছিল ২৬ হাজার ৮৩০ এবং বাকিগুলো নন-এমপিও অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

 



এখন সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদ গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর এনটিআরসিএ কয়েক দিনের মধ্যে প্রত্যেক সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনলাইনে একটি রিকমেন্ডেশন লেটার (সুপারিশপত্র) প্রদান করবে। তারপর প্রার্থী তাঁর সুপারিশপত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান বরাবর আবেদন করবেন এবং প্রধান শিক্ষক যোগদানের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখপূর্বক প্রার্থীকে নিয়োগপত্র প্রদান করবেন। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর প্রার্থী নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ইএমআইএস সেলে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করবেন। এভাবেই তাঁর এমপিওভুক্তি নিশ্চিত হবে।


একজন প্রার্থীর প্রথম এনটিআরসি আবেদন থেকে শুরু করে যোগদানের আগপর্যন্ত সব ধাপ সম্পন্ন হয় অনলাইনে এবং যোগদানের পর এমপিওভুক্তির আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। তাই পুরো প্রক্রিয়া হয় পুরোপুরি স্বচ্ছ ও ঝামেলাবিহীন। এখানে দেনদরবার বা তদবির বা দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এমন সুন্দর ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগ পেয়ে সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার চাকরিপ্রার্থী নিশ্চিতভাবে অনেক সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজে যেখানে লাখ লাখ বেকার যুবক হতাশায় নিমজ্জিত, সেখানে এমন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চয়ই সুন্দর ভবিষ্যতের আশা জাগায়। এনটিআরসিএ শিগগিরই বাকি শূন্য পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করবে।


বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নির্বাচন করে সুপারিশ করার মিশন নিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানের ভিশন হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক শিক্ষক বাছাই নিশ্চিত করা। পরবর্তী সময়ে, ২০১৫ সালে ২২ অক্টোবর এনটিআরসিএ আইন সংশোধনের মাধ্যমে জাতীয় মেধাতালিকা প্রণয়ন ও মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর প্রথমবারের মতো জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করে এই প্রতিষ্ঠান। প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ বছরের বয়সের শর্ত থাকলেও, হাইকোর্টের নির্দেশে তৃতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বয়সের শর্ত শিথিল করে এনটিআরসিএ এবং প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব সনদধারীর আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়।


উল্লেখ্য, নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। সর্বশেষ নিবন্ধন পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে তিনটি স্তর উত্তীর্ণ হতে হয়েছে—নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক এবং এটি একটি মানসম্মত পরীক্ষা পদ্ধতি। এনটিআরসির অধিক্ষেত্র হলো বেসরকারি এবং এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ভকেশনাল, টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাগুলো। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াই এনটিআরসির লক্ষ্য।

এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে এনটিআরসিএ প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৬ জুন ২০১৬। 


বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার পদের বিপরীতে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হন প্রায় ১৩ হাজার ৭১৪ জন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং আবেদনকারী প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২৪ জানুয়ারি ২০১৯। এই ফলাফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জন্য সুপারিশ করা হয় ৩৯ হাজার ৫৩৫ জন প্রার্থীকে এবং বিভিন্ন ধাপে প্রায় ২৯ হাজার প্রার্থী বিভিন্ন পদে যোগদান করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল স্বচ্ছ এবং বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত। যদিও বিভিন্ন সময়ে আপাত বঞ্চিত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বা প্রার্থীর মামলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। 


উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের আগে বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ করা হতো গভর্নিং বডির মাধ্যমে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণপূর্বক ডিজি প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি (স্নাতক পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য) ও জিবির সমন্বয়ে গঠন করা হতো নিয়োগ কমিটি। এই নিয়োগ কমিটিকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো। প্রথমেই শূন্য পদ ঘোষণা, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান, নিয়োগ কমিটি গঠন, আবেদন বাছাই এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা। এরপর যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগপত্র প্রদান ও যোগদান এবং সর্বশেষ এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন। প্রতিটি শূন্য পদে নিয়োগদানের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতো। এই পদ্ধতি ছিল দীর্ঘ ও জটিল।


তা ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রভাব ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ছিল অনেক পুরোনো। তাই প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা এনটিআরসিএ প্রণীত নতুন নিয়োগ পদ্ধতিতে অনেক খুশি এবং তাঁরা মনে করেন তাঁরা এতে অনেক ঝামেলামুক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এনটিআরসিএ ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বা করতে যাচ্ছে। তবে এই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একইভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তার সুফল পাবে। পরিশেষে, সুশিক্ষক সুনাগরিক করার নিয়ামক এবং এনটিআরসিএর কর্তাব্যক্তিরা এ লক্ষ্যে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করে যাবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

কোন মন্তব্য নেই