লোকসানে প্যারাসিটামলের কাঁচামাল উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে
প্যারাসিটামলের কাঁচামাল তৈরিতে ‘প্যারা এমিনো ফেনল’ নামক একটি কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। এই কেমিক্যালটি গত ১১ অক্টোবর প্রতি মেট্রিক টনে আরো ৫০০ ডলার বেড়ে আট হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরের ১ মার্চের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ছিল প্রতি মেট্রিকটন ছয় হাজার ৫০০ ডলার। এই হিসেবে প্যারা এমিনো ফেনলের মূল্য কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৭১ টাকা অর্থাৎ ৩০.৭৭ শতাংশ। অন্য দিকে প্যারাসিটামলের এপিআই বানাতে আরেকটি কেমিক্যাল এসিটিক এনহাইড্রাইড প্রয়োজন হয়। এই এসিটিক এনহাইড্রাইডের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য টনপ্রতি ৯৯০ ডলারের পরিবর্তে এক হাজার ৮৫০ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সে হিসাবে প্রতি কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৩.৫৩ টাকা অর্থাৎ ৮৬.৮৬ শতাংশ। এই দুই কেমিক্যালের কেজি প্রতি মোট মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ২৪৪.৫৩ টাকা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৩০ সেপ্টেম্বর এপিআই উৎপাদন কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে এখন থেকে প্যারাসিটামলের কাঁচামাল (এপিআই) ৯৬৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে না, এর পরিবর্তে কেজিপ্রতি এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি বলে গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল নকীব নয়া দিগন্তকে জানান। আন্তর্জাতিক বাজারে কেমিক্যালসের দাম বৃদ্ধি ও উপরিউক্ত কারণে গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালস প্যারাসিটামলের বাল্ক কাঁচামালের বিক্রয়মূল্য এক হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল নকীব।
জানা গেছে, এর আগে গণস্বাস্থ্য বেসিক ছাড়াও আরো কয়েকটি এপিআই উৎপাদন কোম্পানির আবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে একটি সভা গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্যারাসিটামলের কাঁচামালের কেজিপ্রতি বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫০ টাকা। ওই সভায় প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর মনিটরিং সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ১১ মার্চের পর এ ধরনের আর কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্যারাসিটামলের এপিআইয়ের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে যুক্তি তুলে ধরে কোম্পানিগুলো বলছে, বর্তমানে মার্কিন ডলারের মূল্য ৬০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিক্রয় বিলের ওপর অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের স্থলে ৭ শতাংশ করায় মোট উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। অপর দিকে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধিসহ জীবন-যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, মালামালের পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া এলপিজি ও খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এসব কারণে কিছু ওষুধের দামও বাড়ানো প্রয়োজন।
জানা গেছে, সাধারণ প্যারাসিটামল বিক্রি করে মুনাফা কম হয় বলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ওষুধ উৎপাদন কোম্পানি শুধুই প্যারাসিটামল নামে ওষুধটি উৎপাদনে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এর পরিবর্তে তারা প্যারাসিটামলে অতিরিক্ত কিছু যেমন ক্যাফেইন যুক্ত করে প্রতিটি ট্যাবলেট আড়াই টাকা করে বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। একটি সাধারণ প্যারাসিটামলের দাম ০.৮০ টাকা (৮০ পয়সা) নির্ধারণের কারণে ওষুধ দোকানিরা প্রায়ই ভোক্তার কাছে পুরো এক টাকাই রেখে থাকেন ভাঙতি ০.২০ টাকা (২০ পয়সা) নেই বলে।
আব্দুল নকীব বলেন, এমতাবস্থায় স্থানীয়ভাবে বিক্রয়ের জন্য গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালসের উৎপাদিত বাল্ক কাঁচামালের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। তিনি বলেন, মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা না হলে আগামীকাল (আজ ১৫ অক্টোবর) শুক্রবার থেকে গণস্বাস্থ্য প্যারাসিটামল অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা এপিআই বাল্ক উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, অব্যাহত লোকসানের কারণে আমরা তা করতে বাধ্য হচ্ছি
কোন মন্তব্য নেই