রাশিয়ায় আরইভিল র্যানসমওয়্যার গ্যাংয়ের ১৪ সদস্য গ্রেফতার
২০২১ সালের পুরোটা জুড়ে মার্কিন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর র্যানসমওয়্যার হামলা চালিয়ে একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছিল আরইভিল গ্যাংটি। এর সদস্যদের চিহ্নিত করতে বা খুঁজে পেতে সহায়ক যেকোনো তথ্যের জন্য ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি জানায়, হ্যাকারদের দলটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আরইভিল সদস্যদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে বড় অংকের নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে এফএসবি। তবে গ্রেফতারকৃত হ্যাকারদের যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দেয়া হবে না, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। এফএসবি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আরইভিল গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরতে তত্পর হয়েছিল তারা।
মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গসহ রাশিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলের ২৫টি ঠিকানায় অভিযান পরিচালনা করেছে এফএসবি। রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা তাস বলছে, আরইভিল ক্ষতিকর সফটওয়্যার নির্মাণ করেছে এবং বিদেশী নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির ব্যবস্থা করেছে। আরইভিল সদস্যদের ধরতে পরিচালিত অভিযানে ৪২ কোটি ৬০ লাখ রুবল এবং ৪ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ধারের খবর জানিয়েছে এফএসবি। সাইবার অপরাধ থেকে পাওয়া অর্থে কেনা ২০টি বিলাসবহুল গাড়িও জব্দ করেছে এফএসবি। এক বিবৃতিতে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাটি আরো জানায়, অপরাধীদের সংগঠনটি আর নেই এবং অপরাধী কর্মকাণ্ডে যে তথ্য অবকাঠামো ব্যবহার হতো, তা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই আরইভিল সদস্যদের গ্রেফতারের ঘোষণা দিল এফএসবি। ন্যাটো আর বিস্তার লাভ করবে না, পশ্চিমা শক্তির কাছ থেকে এ নিশ্চয়তা চাইছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে এক লাখ রাশিয়ান সেনা।
সাইবার অপরাধ ও সার্বিক সাইবার সম্পর্কের বিবেচনায় আরইভিল সদস্যদের গ্রেফতারকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সম্পর্কে স্মরণীয় ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছে বিবিসি। দীর্ঘদিন ধরেই র্যানসমওয়্যার হ্যাকারদের নিরাপদে পালিয়ে থাকার সুযোগদানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে রাশিয়া।
গত বছর জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে র্যানসমওয়্যার হামলা মোকাবেলার সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু সবচেয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরাও ওই আলোচনা থেকে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতির প্রত্যাশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাইবার অপরাধ দমনে একাট্টা হলো দুই পরাশক্তি। এ সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে মস্কো এ বার্তা দিতে চেয়েছে, এই মধুর সহযোগিতা শেষ হয়ে যাবে যদি তারা কোনো অবরোধ দেয়। থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সিলভারেদো পলিসি অ্যাক্সিলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরুভিচ জানান, এ সময়ে যে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে, এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। ইউক্রেনে মস্কোর ভূমিকা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন যদি বড় কোনো অবরোধ দেয় তাহলে সব ধরনের কূটনীতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে ক্রেমলিন।
এ গ্রেফতারের মাধ্যমে মস্কো এ বিষয়ও স্বীকার করে নিল যে রাশিয়ায় বড় কোনো র্যানসমওয়্যার গ্যাংয়ের উপস্থিতি রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই