গ্যাস সংকটে ব্যহত উৎপাদন, গুণতে হচ্ছে লোকসান - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

গ্যাস সংকটে ব্যহত উৎপাদন, গুণতে হচ্ছে লোকসান


গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েলের উৎপাদন। যে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণে এখন মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান থাকলেও দিনে মাত্র ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা গ্যাস পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দিনে ৪০ টন তেল উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও হচ্ছে মাত্র ১৮ টন। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিন লোকসান গুনছে চার থেকে ছয় লাখ টাকা।


একসময় সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরুর এক দশক না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে কারখানাটি। পরে মুনাফা না থাকায় পিছু হটতে শুরু করে প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুনরায় চালুর পর প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকায় ২০০ টন কাঁচামাল ক্রয় করছে। এর মধ্যে ১৫৫ টন নিউ অয়েল ফিশ ফিড ও ৪০ টন তেল উৎপাদনের কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় গ্যাস সংকটের কারণে দিনে মাত্র ১২ ঘণ্টা উৎপাদন হচ্ছে। এতে ১৮০ জনের অধিক শ্রমিক কাজ করে দিনে মাত্র ১৮ টন তেল উৎপাদন করে। এছাড়া তেল শোধনের প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ফলে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে চার থেকে ছয় লাখ টাকা।


শেরপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও শোধন সম্ভব হলে রাইস ব্র্যান তেলের বাজার সৃষ্টি সম্ভব ছিল। ভোজ্যতেলের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিজেরা তেল না পেলেও ভারত, চীনসহ আমদানিকারক দেশগুলোতে চড়া দামে রাইস ব্র্যান অয়েল বিক্রি হচ্ছে। এসব দেশে এ তেলের জনপ্রিয়তা অন্য তেলের চেয়ে বেশি।


নাগরিক সংগঠন জন উদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার এ খাতে নজর না দিলে দেশে রাইস ব্র্যান অয়েলের স্থানীয় উৎপাদন ও বাজারজাত অচিরেই শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।


তিনি আরও বলেন, বাজারে প্রচলিত অন্য ভোজ্যতেলের তুলনায় চালের কুঁড়া থেকে উৎপাদিত তেল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবেও এর স্বীকৃতি রয়েছে।


বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা (বিসিএসআইআর) বলছে, ভোজ্যতেলে যেসব খাদ্যগুণ থাকা দরকার, তা জলপাই তেলের পর সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাইস ব্র্যান অয়েলে। এতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়া এ তেল শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।


পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের আহ্বায়ক মেরাজ উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হলে শেরপুরের ধানকলে উৎপাদিত কুড়া দিয়েই রইস ব্র্যান তেলের শতভাগ উৎপাদন সম্ভব। এতে স্থানীয় বাজারেও ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে।


শেরপুরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার বলেন, সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখী ও পাম অয়েলসহ এখন পর্যন্ত যত রকমের ভোজ্যতেল ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনোটির কাঁচামালেই দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ সচল রাখতে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এর বিপরীতে রাইস ব্র্যান অয়েলের কাঁচামাল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই পুরোপুরি জোগান পাওয়া যায়। স্থানীয় ধানকলে উপজাত হিসেবে এটি তৈরি হয়। এর উৎপাদন ও শোধন সম্ভব হলে কম দামে ভোজ্যতেল বাজারজাত সম্ভব।


শেরপুরে অবস্থিত কারখানা ইনচার্জ ক্যাপ্টেন আহসান হাবীব বলেন, কারখানার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল গ্যাস পাই। বিষয়টি নিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। গ্যাসের যে সরবরাহ তাতে মাত্র ১২ ঘণ্টা উৎপাদন সম্ভব। ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন ও শোধনে নিজস্ব এলপিজি প্ল্যান্ট বসানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে এলপিজি দিয়ে উৎপাদনে গেলে খরচ বাড়বে।


এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের জোনাল বিপণন অফিস শেরপুরের ব্যবস্থাপক এম এস আলম বলেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ ইএসএস শাখা থেকে কারখানাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তিন ইঞ্চি পাইপ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তারা যদি হাইয়ার ডায়ামিটার পাইপের সংযোগ নিতে পারে, তাহলে গ্যাস সংকট দূর হবে।

কোন মন্তব্য নেই