গেমিংয়ে মনোযোগ বাড়াচ্ছে নেটফ্লিক্স ও টিকটক - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

গেমিংয়ে মনোযোগ বাড়াচ্ছে নেটফ্লিক্স ও টিকটক


সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। করোনাকালে রেকর্ডসংখ্যক সাবস্ক্রাইবার পেলেও গত কয়েক মাসে তাতে পতন দেখছে নেটফ্লিক্স। এদিকে গত বছর সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া অ্যাপ ছিল টিকটক। একের পর এক নতুন ফিচার এনে অল্প বয়সীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম বাইটড্যান্স মালিকানাধীন কোম্পানিটি। ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে একসময় একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউটিউবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও লাইকির মতো প্লাটফর্ম। জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে গত বছর ইউটিউব শর্টস ফিচার চালু করে গুগল নিয়ন্ত্রিত প্লাটফর্মটি। সম্প্রতি ইউটিউবের এ পরিষেবার সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারী ১৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। সংক্ষিপ্ত ভিডিও শেয়ারের ক্ষেত্রে টিকটকের সঙ্গে ভালোই টেক্কা দিচ্ছে ইউটিউব শর্টস।


শক্তিশালী গ্রাহকভিত্তি তৈরিতে বিভিন্ন পলিসি নিচ্ছে নেটফ্লিক্স ও টিকটকের মতো স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গেম স্ট্রিমিংয়ে জোর দেয়া। বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটিরও বেশি গেমার রয়েছে এবং বাজারের আকার ২০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ আকর্ষণীয় ও লাভজনক খাত গেমিং। সব সাবস্ক্রাইবারের জন্য গত বছর মোবাইল গেমিং চালু করেছে নেটফ্লিক্স। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্ট্র্যাঞ্জার থিংস। এদিকে ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন গেমের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে টিকটক।    


বিনোদন শিল্পকে বড় আকারে পাল্টে দিয়েছে নেটফ্লিক্স ও টিকটক। তবে প্লাটফর্ম দুটি ভিন্নভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নেটফ্লিক্সের আয়ের প্রধান উৎস সাবস্ক্রিপশন। তারা কনটেন্টের লাইসেন্স নিতে বা কনটেন্ট তৈরিতে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে। এদিকে দর্শকদের সঙ্গে বিজ্ঞাপনদাতাদের সংযোগ স্থাপন করে আয় করে টিকটক। তবে উভয় প্লাটফর্মের মধ্যেই কিছু মিল রয়েছে। প্রথমত, তারা ইন্টারনেট প্লাটফর্মে ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করে। দ্বিতীয়ত, তারা ক্রমে গ্রাহকভিত্তি বাড়ানোর চেষ্টায় থাকে। তৃতীয়ত, মৌলিক ও অনন্য কনটেন্টের সুবিধা নিতে চায় তারা। চতুর্থত, নিজস্ব পরিষেবা উন্নয়নে তারা গ্রাহক ডাটা সংগ্রহ ও ব্যবহার করে। পঞ্চমত, বিনোদন মাধ্যমের অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে স্ট্রিমিং সাইট দুটি।


জনপ্রিয় অনেক ফিল্ম ও টেলিভিশন সিরিজ নেটফ্লিক্স ছেড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্লাটফর্মে ভিড় জমাচ্ছে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে অন্যান্য প্লাটফর্মের চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে টিকটক। গ্রাহক ধরে রাখা, নতুন গ্রাহক সৃষ্টি ও মৌলিক কনটেন্ট সৃষ্টিতে নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে প্লাটফর্ম দুটি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে গেমিং। সম্প্রতি প্রকাশিত নিউজু কনজিউমার ইনসাইটস প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে সক্রিয় বিশ্বের ৭৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীই কোনো না কোনো সময় গেমস খেলেন। মিলেনিয়ালদের মধ্যে গেমিং সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবা দ্বিতীয় জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



মহামারী শুরুর পর থেকে কনটেন্ট তৈরিতে বড় আকারের বুম হয়েছে। অল্প বয়সী দর্শক শ্রেণী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনলাইনে ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টে ঝুঁকছে। স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে বিভিন্ন শোয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে গেম নিয়ে আসছেন গেমাররা। নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় শো স্কুইড গেমের ফ্যান-মেড গেম ভার্সন হচ্ছে ক্র্যাব গেম। টুইচের মতো স্ট্রিমিং প্লাটফর্মেও লাখো ঘণ্টা ভিউ হচ্ছে। এদিকে মাইনক্রাফটের জনপ্রিয়তা ভিডিও স্ট্রিমিং সাবস্ক্রিপশন-নির্ভর পরিষেবাকে সহায়তা করছে। ইউটিউবে মাইনক্রাফট সংশ্লিষ্ট ভিডিও এক ট্রিলিয়ন বারেরও বেশি দেখা হয়েছে।


স্ট্রিমিং দুনিয়ায় বড় আকারের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে নেটফ্লিক্স ও টিকটক। ডিজনি প্লাস, অ্যামাজন প্রাইম, অ্যাপল টিভি ও ইউটিউবও আগ্রাসী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নেটফ্লিক্স ও টিকটকের দুর্বলতার জায়গা হলো, অন্যদের যেখানে স্ট্রিমিংয়ের বাইরেও অন্যান্য লাভজনক উদ্যোগ রয়েছে, সেখানে স্ট্রিমিংই মূল উদ্যোগ নেটফ্লিক্স-টিকটকের। খেলনা ও থিম পার্ক হচ্ছে ডিজনির প্রধান একটি উদ্যোগ। অ্যামাজনের আয়ের বড় অংশ আসে অনলাইনে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে। অ্যাপলের রয়েছে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন বিক্রির লাভজনক ব্যবসা। এছাড়া সার্চ ইঞ্জিন ও বিজ্ঞাপন খাত থেকে বড় অংকের আয় করে গুগল। স্ট্রিমিং যুদ্ধে হারলেও এ কোম্পানিগুলোর বড় আকারের লোকসানের ভয় নেই। কিন্তু নেটফ্লিক্স ও টিকটকের সবকিছু নির্ভর করছে স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আয় ধরে রাখার ওপর। এ কারণে গেমিং শিল্পে প্রবেশ করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার এ চেষ্টা তাদের। 

কোন মন্তব্য নেই