কভিড-১৯ মহামারীতে সাইবার হামলা দ্বিগুণ বেড়েছে
বিশ্বে প্রতিনিয়ত সাইবার হামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত ডিভাইস থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা ক্রমাগত বাড়ছে। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে সাইবার হামলার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে মাসিক সাইবার হামলার সংখ্যা চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি বন্দরটির নির্বাহী পরিচালক জিনি সেরোকা বিবিসির কাছে এ কথা জানান। পশ্চিম গোলার্ধের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর হচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস।
প্রতি বছর এ বন্দরে ২৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্যপরিবাহী কার্গো পরিচালনা করা হয়। সেরোকা জানান, বন্দরে যেসব হামলা চালানো হয়, সেগুলো ইউরোপ ও রাশিয়া থেকেই আসে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিতেই এ ধরনের হামলা করা হয়।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্যানুযায়ী, এসব হামলা রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে আসছে। যারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষতি করতে চাইছে তাদের চেয়ে আমাদের কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। সমুদ্রবন্দরগুলো দিয়ে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। যে কারণে এসব স্থান সাইবার অপরাধীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে ওঠে। হামলাকারীরা প্রতিনিয়ত র্যানসমওয়্যার, ম্যালওয়্যার, স্পিয়ার ফিশিংসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার হামলা পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবসা কার্যক্রমে বাধা তৈরির পাশাপাশি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
লস অ্যাঞ্জেলেস পোর্ট কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে ও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ক্রাইম টিমের সঙ্গে কাজ করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কয়েক লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি বিশ্বের প্রথম সাইবার রেজিলিয়েন্স সেন্টার তৈরি করেছে যেটি এফবিআইয়ের একটি অংশ।
সেরোকা বলেন, যেকোনো ধরনের সাইবার হামলা মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব হামলা আমাদের পণ্য আমদানি-রফতানি ও সরবরাহে বাধা তৈরি করতে পারে। সাইবার রেজিলিয়েন্স সেন্টার মূলত সমুদ্রপথে নিরাপদে পণ্য সরবরাহে গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সহায়তা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ফলে কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল এবং সবাইকে গৃহবন্দি জীবনযাপন করতে হয়েছে। সে সময় থেকে সরবরাহ চেইনের সংকট কমতে থাকে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে প্রবেশের জন্য ১০৯টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছিল। বর্তমানে সেখানে মাত্র ২০টি রয়েছে।
সেরোকোর বিশ্বাস, ২০২৩ সালের আগে পণ্যবাহী জাহাজের এ ভিড় সহজে কমবে না। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কার্গো আসছে। কিন্তু সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো, সরবরাহ চেইন ও অর্থনীতির জন্য বন্দরগুলো যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ দুই বছরে আমরা সেটি ভালোভাবে জানতে পেরেছি। তাই সাইবার হামলাসহ যেকোনো প্রকার আক্রমণ থেকে বন্দরকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

কোন মন্তব্য নেই