ছাঁটাই দিয়ে মাস্ক অধ্যায় শুরু
মাইক্রোব্লগিংয়ের এ প্লাটফর্ম অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান নাটকীয়তারও অবসান হলো। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্কের মত পরিবর্তন, টুইটারের অনীহা ও অধিগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন করতে মামলা দায়ের ও আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার মতো বিষয়গুলো এ চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। টুইটারের পক্ষ থেকে এটি নিশ্চিত না করা হলেও বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে আগের এক বিনিয়োগকারী জানান, চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডানপন্থীদের অনেকেই টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে পরাগ আগরওয়ালকে বরখাস্তের বিষয়টি উদযাপন করবে। তাদের বিশ্বাস, আগরওয়াল ও জ্যাক ডরসির মতো ব্যক্তিরা উদারপন্থী, বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, আগরওয়াল, টুইটারের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা নেড সেগাল এবং শীর্ষ আইনি ও নীতি নির্বাহী বিজয়া গাড্ডে আর প্লাটফর্মটির সঙ্গে নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি সম্পন্নের পর আগরওয়াল ও সেগালকে স্যান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত টুইটারের প্রধান কার্যালয় থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিজ স্টোন আগরওয়াল, সেগাল ও গাড্ডেকে ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অধিগ্রহণ চুক্তি সম্পাদনের জন্য টেসলা প্রধান ইলোন মাস্ককে আদালত যে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তার ৪৮ ঘণ্টা বাকি থাকতেই টুইটার সদর দপ্তরে পা দিয়েছিলেন তিনি। টুইটারের সদর দপ্তরে প্রবেশের সময় তার হাতে একটি সিঙ্ক ছিল। প্রবেশের ভিডিওটি টুইট করে ক্যাপশনে ইলোন লিখেছিলেন, এন্টারিং টুইটার এইচকিউ–লেট দ্যাট সিঙ্ক ইন। টুইটারে এখন তিনি নিজের পরিচয় দিচ্ছেন চিফ টুইট বলে।
অধিগ্রহণ শেষে আরেক টুইটে স্পেসএক্সের মালিক জানান, তার টুইটার কেনার উদ্দেশ্য টাকা বানানো নয়। গার্বার কাওয়াসাকি ওয়েলথ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এই প্রধান নির্বাহী রস গার্বার বলেন, আমার মনে হয়ে আদালত তাকে বাধ্য করেছে। সত্যি বলতে, শুরু থেকেই এটা খুব গোলমেলে ছিল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ ও মাইক্রোব্লগিংয়ের প্লাটফর্ম থেকে ৭৫ শতাংশ কর্মী বরখাস্তের যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা যথার্থ নয়। কর্মীদের মধ্যে কারা কাজের ক্ষেত্রে কতটুকু ভালো সেটির ওপর নির্ভর করবে। তবে ৫০ শতাংশ কর্মী বরখাস্ত করা হতে পারে।
গার্বার বলেন, টুইটারে অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছে এবং প্লাটফর্মটি তাদের অধিকাংশকে ধরে রাখতে চায়।
প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করলেও মাস্ক নিজে হয়তো এখন প্রধান নির্বাহীর পদে বসছেন না। তবে প্রতিষ্ঠানটি যে পুরোপুরি চিফ টুইটের নিয়ন্ত্রণে সেটি নিশ্চিত। সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাহী পারাগ আগরাওয়ালের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধের বিষয়টি উঠে এসেছিল আদালতে জমা দেয়া নথিপত্রে থেকেই। তাই আগরাওয়ালের বিদায় সেই অর্থে অপ্রত্যাশিত ছিল না।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগে টুইটারে নিষিদ্ধ হওয়া ব্যক্তিরাও এখন মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মটিতে ফেরার সুযোগ পেতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। টুইটারে নিষিদ্ধ হওয়া রক্ষণশীলদের তালিকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকলেও আর কখনই টুইটারে ফিরবেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
টুইটারে মাস্কের বিনিয়োগের বিষয়টি প্রথম দিকে কারো চোখেই সেভাবে ধরা পড়েনি। জানুয়ারি থেকেই টুইটারের শেয়ার কিনছিলেন টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান। মার্চে খবর রটে, টুইটারে ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনে নিয়েছেন তিনি। এপ্রিলের মধ্যে কোম্পানির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিকে পরিণত হন মাস্ক; মাস শেষ হওয়ার আগেই ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে কোম্পানি কিনে নেয়ার সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিনি।
সে সময়ে স্প্যাম বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট দূর করে প্লাটফর্মটিকে বাকস্বাধীনতার মুক্তমঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন মাস্ক। কিন্তু মে মাসের মাঝামাঝিতে এসে সুর পাল্টান এ ধনী। প্লাটফর্মে বট ও স্প্যাম অ্যাকাউন্টের সংখ্যা টুইটারের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে অভিযোগ তোলেন। এরপর জুলাইয়ে সমঝোতা চুক্তি থেকে সরে আসার কথা জানান। কিন্তু টুইটারের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলা হয়, সমঝোতা চুক্তির কারণে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে আইনত বাধ্য ইলোন মাস্ক।
টুইটার এরপর আদালতেও যায়। সর্বশেষ অক্টোবরে মামলার বিচারকাজ শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আবার মত পাল্টান মাস্ক। বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। টুইটার মাস্কের প্রতিশ্রুতিতে রাজি না হলেও মাস্ককে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে বিচারকাজ স্থগিত করে ডেলাওয়্যারের আদালত। সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিলেন টেসলা প্রধান।

কোন মন্তব্য নেই