ক্ষতির মুখে প্রযুক্তি জায়ান্টদের ক্লাউড ব্যবসা
গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে কম্পিউটিং সক্ষমতা ও অ্যাপ ব্যবহারে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড পরিষেবা দিয়ে থাকে। যা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে বিপুল অর্থ আয়ের এ মাধ্যমেও অবনতি হয়েছে। খবর ইয়াহু ফাইন্যান্স।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি প্রান্তিকে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ অ্যাজুর ক্লাউড ডিভিশন প্রত্যাশার তুলনায় কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। একই দিনে গুগলের মালিকানা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট জানায়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের গুগল ক্লাউড প্লাটফর্মের প্রবৃদ্ধি ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে, ২০২১ সালের একই সময়ে যার হার ছিল ৪৪ শতাংশ।
অন্যদিকে অ্যামাজন সম্প্রতি প্রকাশিত আয় প্রতিবেদনে তাদের ওয়েব সার্ভিসেসে (এডব্লিউএস) ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা ব্যক্ত করেছে। গত বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি যেখানে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে তার তুলনায় এবারের হার কম। এক সাক্ষাত্কারে পাইপার স্যান্ডলার ইকুইটি রিসার্চ অ্যানালিস্ট ব্রেন্ট ব্রেসলিন বলেন, এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে বাজেটের ওপর আমরা চাপ দেখতে পাচ্ছি। ক্লাউড প্লাটফর্ম ও সফটওয়্যার যে এন্টারপ্রাইজের জন্য খুবই কার্যকর সেটি আমরা বলতে পারছি না।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ক্লাউডের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বর্তমানে পরিষেবা গ্রহণের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে তাদের ব্যয় কমাচ্ছে এবং আসন্ন মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদহার ও মন্দার মধ্যে বেঁচে থাকার বিষয়ে ভাবছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় সংকোচনের কারণে বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ বাঁচাতে সহায়তা করে। নিজস্ব সফটওয়্যার কেনা বা পরিষেবা পরিচালনার পরিবর্তে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড পরিষেবা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ওয়েবের মাধ্যমে এসব জিনিস ব্যবহার করতে পারে। অ্যামাজন, গুগল ও মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেগমেন্ট এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যেখানে ভোক্তা বা গ্রাহক যখন ক্লাউড সার্ভিস গ্রহণ করবে শুধু তখনই ফি দেবে।
প্রযুক্তিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে ব্যাখ্যা করেছেন। এটি হলো সবসময় নিজের কাছে গাড়ি রাখার পরিবর্তে প্রয়োজনের সময় গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যাওয়া। এতে গ্রাহক বা ভোক্তাকে প্রতি মাসে কিস্তি পরিশোধ, ইন্স্যুরেন্স ও মেরামত ব্যয় বহন করতে হবে না। যখন গাড়ি ব্যবহার করবেন শুধু তখন ভাড়া দেবেন। ক্লাউড পরিষেবা ব্যবসায় মার্জিন বা মুনাফার হার খুবই বেশি। গত প্রান্তিকে মাইক্রোসফটের পুরো ক্লাউড খাতের মুনাফা বা মার্জিন ছিল ৭৩ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের মার্জিন ছিল ২৯ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা এ পরিসংখ্যান দেখে কভিড-১৯ মহামারীর আগে ও পরে অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছিলেন। মূলত মুনাফার প্রত্যাশা করলেও প্রবৃদ্ধি অনেকটাই কমে গিয়েছে।
ইয়াহু ফাইন্যান্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের ইকুইটি অ্যানালিস্ট রিশি জালুরিয়া বলেন, ক্লাউড পরিষেবা খাত ঘিরে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেউই এটি অতিক্রম করতে বা এড়াতে পারবে না। এমনকি মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টও না। এর পর পরই বিনিয়োগকারীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী মাইক্রোসফটের ৬ শতাংশ, অ্যামাজনের ৩ দশমিক ৮ ও অ্যালফাবেটের হিস্যা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই