হিটলারের নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

হিটলারের নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি চিত্রকর্ম ছিল বার্লিন জাদুঘরে। রঙিন কালি আর জলরঙে আঁকা ছবিগুলো তিনি ১৯৩০ সালে জার্মানিকে উপহার দিয়েছিলেন। তার সাত বছর পরেই ১৯৩৭ সালে নাৎসি বাহিনী চিত্রকর্মগুলোকে 'ডিজেনারেট শিল্পকর্ম' হিসেবে আখ্যা দেয়।


হিটলারের সরকার পোস্ট ইমপ্রেশনিস্ট আর্টকে মানসিক বিকারগ্রস্ততা হিসেবে দেখতেন। ১৬ হাজারের বেশি চিত্রকর্ম এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। তালিকায় ভ্যানগগের মতো বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার আঁকা ছবিকেও বিকারগ্রস্ত শিল্পকর্মের তকমা পেতে হয়েছিল তখন।    


নন-ইউরোপীয় হিসেবে প্রথম নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২১ সালে, ১৯২৬ সালে এবং ১৯৩০ সালে মোট তিনবার জার্মানি সফর করেন তিনি। অবশ্য ততোদিনে তার দুই ডজনের বেশি বই জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন সভায় তার আলোচনার খবর দৈনিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত ছাপে। স্থানীয় গণমাধ্যম 'প্রাচ্যের জ্ঞানী ব্যক্তি' হিসেবে তার বন্দনা করতো তখন। ১৯৩০ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথের অন্তত ৩০০ চিত্রকর্ম ইউরোপে যায়। সেখানে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে দেখানো হয় ১০০ টির বেশি। বার্লিনের ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্টে দেখানো হয় ৫০টির মতো।  


১৯৩৭ সাল পর্যন্ত চিত্রকর্মগুলো বার্লিনের বারোখ ক্রাউন প্রিন্স প্যালেসে রাখা হয়েছিল। ন্যাশনাল গ্যালারিটাও মূলত সেখানেই। ১৫ অক্টোবর ১৯৩৭ সালে হিটলার সরকারের তথাকথিত ডিজেনারেট শিল্পের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি চিত্রকর্ম কোপদৃষ্টিতে পড়ে। তাদের নামগুলো মাস্ক, পোর্ট্রেট, গার্ল, মাস্ক (দ্বিতীয়) এবং টু বার্ডস। পরিণামে চিত্রকর্মগুলো প্রাসাদ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তার পরের ইতিহাস অস্পষ্ট।


১৯৪১-৪২ সালে নাৎসি যুগে হারিয়ে যাওয়া চিত্রকর্ম নিয়ে তোড়জোর শুরু হলে সামনে আসে রবীন্দ্রনাথের নাম। তার দুইটি চিত্রকর্মকে অন্য চিত্রকর্মের দ্বারা বিনিময় করা আর দুইটিকে নষ্ট হয়ে যাবার কথা উল্লেখ করা হয়। বাকি চিত্রকর্মের ব্যাপারে কোন মন্তব্য মেলেনি। অবশ্য ঐতিহাসিক আর শিব কুমার বিশ্বাস করেন, তিনটি চিত্রকর্ম পরবর্তীতে ভারতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাকি দুটি হারিয়ে গেছে। মিউনিখের পিনাকোথেক দের মডার্নে জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ড. অলিভার কেইস দাবি কিছুটা ভিন্ন। তিনি বলেন, নিখোঁজ মনে করা চিত্রকর্ম দুটির একটি ১৯৬৪ সাল থেকে দ্য বেভারিয়ান স্টেট পেইন্টিং সংগ্রহশালায় ছিল। দ্বিতীয় পেইন্টিং ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে নিলামে বিক্রি হয়ে যায়।  


নিজের চিত্রকর্মকে রবীন্দ্রনাথ ‌'শেষ বয়সের প্রিয়া' বলে অভিহিত করতেন। জীবন থেকে ষাট বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে তিনি শুরু করেন ছবি আঁকা। ১৯৪১ সালে পরলোকগমনের আগে পর্যন্ত ২৩ শতাধিক চিত্রকর্ম অঙ্কন করেছেন তিনি। চিত্রকর্মগুলো আধুনিক শিল্প নিয়ে তার জ্ঞানের পরিধি ঠাহর করা যায়।  

কোন মন্তব্য নেই