সরকারি হাসপাতালে মার্চ থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ পাচ্ছেন চিকিৎসকরা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

সরকারি হাসপাতালে মার্চ থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ পাচ্ছেন চিকিৎসকরা


সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখতে পারবেন। হাসপাতালের সময়ের বাইরে এ চেম্বারের সুবিধা থাকবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গতকাল বিভিন্ন চিকিৎসক পেশাজীবী সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস বিষয়ক জরুরি সভায়’ সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগামী মার্চে এ সুবিধা শুরু হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস সাধারণভাবে কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট অফিস সময়ের বাইরে হাসপাতালেই চেম্বার করতে পারবেন। চিকিৎসকরা বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে যেভাবে চেম্বারে রোগী দেখেন তেমনিভাবেই এখানে দেখবেন। এ বিষয়ে চিকিৎসক নেতারাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের মতামত নিয়েছে সরকার। বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হচ্ছে।’


দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর এ সিদ্ধান্ত স্বাধীনতার মাসের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাজটি শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়ে, তা থেকে মুক্তি পাবে।’


স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত কমিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি হাসপাতালে চেম্বার করার বিষয়টি পর্যায়ক্রমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিশেষায়িত বা টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে চালু করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়। কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করবে বলেও জানায়। একই সঙ্গে বৈকালিক কনসালটেশনের মানোন্নয়নের জন্য অপারেশন থিয়েটার বা অস্ত্রোপচারের কক্ষ চালু ও পরীক্ষাগারের সেবা আরো যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানায়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে (সর্বোচ্চ চিকিৎসার হাসপাতাল) মূলত জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও চিকিৎসকরাই রোস্টার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন। চেম্বারে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত স্বনামধন্য চিকিৎসকদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।


সুপারিশের মধ্যে এও বলা হয়েছে, বর্তমানে চলমান চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার কাজ যেভাবে চলছে তা কোনোক্রমেই বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে প্রথমে কেবল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু করা এবং এ অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে তা চালু করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বৈকালিক রোস্টার চালু করা, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর দেয়া, বহির্বিভাগে রোগী দেখা ও বসার স্থানের আধুনিকায়ন, নার্সসহ প্রয়োজনীয় সহায়ক লোকবলের উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা ও রোগীদের রোগ নিরীক্ষণের প্রতিবেদন দ্রুততম সময়ে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।


রোগী ভর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, বৈকালিক রোগীদের ভর্তির জন্য পৃথক বিছানা, অপারেশন থিয়েটার চালু থাকতে হবে। এ প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আয়ের ১০ শতাংশ আয়কর প্রদান সাপেক্ষে ৬০ শতাংশ চিকিৎসক ও বাকি ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা সহায়তাকারীদের মধ্যে বিতরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোয় যেসব চিকিৎসক একামেডিক ও গবেষণায় কাজ করনে তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন না। সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু করলে জনগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


জানা যায়, বিএসএমএমইউতে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের মতো বৈকালিক কনসালটেশন সার্ভিস আগে থেকেই চালু রয়েছে। ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক এমএ কাদেরী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ বিষয়ে প্রস্তাব করেছিলেন। এ কনসালটেশন সার্ভিস দেশের সাধারণ রোগীদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে বলেও কমিটির পর্যালোচনায় দাবি করা হয়।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা নিজের কর্মস্থলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বা ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস করেন এমন কোনো নজির উন্নত দেশগুলোয় নেই। তাছাড়া দেশে প্রত্যক্ষভাবে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ছে এমনটি দেখা গেলেও বাস্তবিক অর্থে স্বাস্থ্য আর সেবা হিসেবে থাকছে না। বিএসএমএমইউতে বৈকালিক যে কনসালটেশন চলছে তাও বাস্তবিক অর্থে কার্যকর নয়। কেননা সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তেমন একটা বসেন না। তাই ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের বিষয়ে আরো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস আদতে কতটুকু উপকারে আসবে তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এমনও হতে পারে, এটা চালু হলে সরকারিভাবে যে সময়ে রোগী দেখা হতো, সেসব রোগীকে বৈকালিক কনসালটেশনের সময় আসতে বলা হবে। সরকারি সময়ে সেবার পরিসর ও মান কমে যেতে পারে। অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৈকালিক কনসালটেশনে না থেকে মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে চালিয়ে নেয়া হবে। তাই উচিত হবে কোনো সরকারি চিকিৎসককে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বাইরে কোনো কাজ করতে না দেয়া। তারা যেন পুরো সময়টা গবেষণা ও সরকারি চিকিৎসাসেবায় ব্যয় করতে পারেন, এজন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা দেয়া। দেশে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে এমন একটি প্রশ্ন উঠলে দেখা যাবে, বেসরকারিভাবে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছেন না। সরকারি চিকিৎসকরাই বেসরকারিভাবে প্র্যাকটিসে যাচ্ছেন। তাই শুধু সরকারিভাবে বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে, এমন বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী অবশ্য মনে করছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস সেবার পরিসর আরো বাড়াবে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যবস্থা বিএসএমএমইউতে চলছে। এটা একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সহজেই বাকি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাটি চালু করা যাবে। অনেক চিকিৎসক রয়েছেন, তারা আর্থিক বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে সেবাকে গুরুত্ব দেন। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস অনেক গুরুত্ব বহন করবে।’


স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নাজমুল হকসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।


কোন মন্তব্য নেই