মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এলো মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এলো মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি


বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি ব্যবহার করছে দেশের তিন বৃহৎ হাসপাতাল। এ পদ্ধতিতে পরিবেশ দূষণ ঘটে না, পরিবেশবান্ধব এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে না, কোনো জীবাণুও অবশিষ্ট থাকে না। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট ও টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। মেডিক্যাল বর্জ্যরে সাথে হাসপাতালের অন্যান্য বর্জ্যও একই পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবশিষ্ট হিসেবে যা থাকছে, তা উন্নত বিশ্বে রিসাইকেল করা হলেও বাংলাদেশে সে ব্যবস্থা নেই বলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।


গতকাল সোমবার টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা হাসপাতালের মেডিক্যাল ও অন্যান্য বর্জ্য হাসপাতাল থেকে এনে মেশিনে দিচ্ছেন এবং আধা ঘণ্টা পর পানিহীন শুকনো অবশিষ্ট অংশ মেশিন থেকে বের হয়ে আসতে।’ মাইক্রোওয়েভ মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেড ভিশন লিমিটেডের ম্যানেজার শাহেদুজ্জামান বলেন, মেডিক্যাল বর্জ্যে থাকে গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, সিরিঞ্জ, সুঁই, বোতল, স্যালাইন ব্যাগ, নল, ছুরি-কাঁচি, মানুষের শরীর থেকে কেটে ফেলা অংশ এবং অন্যান্য ছোট ছোট, কাঠ, লৌহদণ্ড। যেগুলোতে মনে করা হয় জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো এই মেশিনের ফেলা হয়। মেশিনটির ভেতরে থাকা ধারাল ব্লেড দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে সব কিছুই মুহূর্তেই ডাস্ট হয়ে যায় এবং টেক্সটাইল মিলের ফেলে দেয়া সুতার মতো দেখা যায়।


মেশিনের ভেতরের সব কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়। এতে ৯৯.৯৯৯৯৯ (এইট লগ টেন) পর্যন্ত জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায় এবং মেশিনের ভেতরে থাকা ঘূর্ণিয়মান ব্লেডগুলো জীবাণুমুক্ত শুকনো বর্জ্যগুলোকে বের করে দেয়। পরে সেগুলোকে সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলে দিলেই হয়, এতে কোনো ধরনের বিপদ থাকে না। শাহেদুজ্জামান বলেন, ব্যবস্থাপনার পর যে অবশিষ্ট বের হয় মেশিন থেকে সেগুলো আগের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম জায়গা দখল করে এবং ২৫ শতাংশ ওজন কমিয়ে ফেলে। কেউ ইচ্ছা করলে জীবাণুমুক্ত বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতেও পারে।

উল্লেখ্য, হাসপাতালের বর্জ্য সঠিকভাবে ধ্বংস করা না হলে তাতে নানা ধরনের জীবাণু যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি এইডস ছড়িয়ে পড়তে পারে।


বাংলাদেশে কেবল ২০০৮ সালে ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস’ নামক নীতিমালা প্রণয়ন করে। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। প্রিজম নামক একটি সংস্থা দেশের ১২টি জেলার হাসপাতাল বর্জ্য সংগ্রহ করে ইনসিনারেশন নামক পদ্ধতির মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলছে। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটে এবং পুড়িয়ে ফেলার কারণে যে গ্যাস বের হয় তাতে মানুষের নানা ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এতে ডিঅক্সিন নামক একটি গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে এবং চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি কার্সিনোজেনিক। এ ছাড়া সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে মেডিক্যাল বা হাসপাতাল বর্জ্যরে মতো বিষাক্ত ও জীবাণুযুক্ত বর্জ্য কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটিতে পুঁতে ফেলছে এবং পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি হচ্ছে। মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে বর্জ্যরে মধ্যে মিশে যাওয়া রাসায়নিক পদার্থ থেকে। এতে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্লাস্টিকের মতো পদার্থ থেকে যাচ্ছে, যা কখনো মাটির সাথে মিশে যায় না।


কোন মন্তব্য নেই