যমজ সন্তান মর্গে এলো বাবাকে খুঁজতে - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

যমজ সন্তান মর্গে এলো বাবাকে খুঁজতে



দুই মামার কোলে যমজ শিশু। নাম আব্দুল্লাহ ও মেহজাবিন। বয়স ১১ মাস। মামারা অপেক্ষায় আছেন শিশু দুটির বাবার লাশের জন্য। অপলক চেয়ে শিশু দুটি। অনেক   মানুষের ভিড় দেখে কাঁদছে শিশু দুটিও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন কাউসার আহমেদ। পড়তেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগে।
২০১৪-২০১৫ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ১৭তম। মেধাবী কাউসার আহমেদ ৩ বছর আগে ছাড়েন মাস্টারদা সূর্যসেন হল। এরপর ওঠেন চকবাজার শাহী মসজিদ এলাকায়। 

সেখানেই নন্দ কুমার দত্ত রোডে, চুড়িহাট্টাতে দেন মদিনা মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় বাড়ি কাউসারের। বাবার নাম খলিলুর রহমান। তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় পরিবারিকভাবে বিয়ে হয় কাউসারের। স্ত্রী মুক্তা গৃহিণী। লেখাপড়া, ব্যবসা, সংসার সবকিছু স্বপ্নের মতো চলছিল। এরই মাঝে ঘর আলো করে আসে জমজ সন্তান। ছেলের নাম রাখেন আব্দুল্লাহ আর মেয়ের নাম মেহেজাবিন। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে শিশু দুটি। বাবা কাউসারের লেখাপড়াও চলতে থাকে সমান তালে।

স্বপ্ন ছিল হবেন ব্যাংক কর্মকর্তা। সেই স্বপ্ন অধরা রেখে চলে গেলেন কাউসার। এতিম করে দিয়ে গেলেন ফুটফুটে দুই শিশুকে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন ছিল মিড টার্ম পরীক্ষা। কাউসার আহমেদের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন বন্ধু সাদিক খান তমাল। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সকালে একসঙ্গে পরীক্ষা দিলাম। দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছিলাম। আর রাতে সে লাশ হয়ে গেলো। কাউসারের মা, স্ত্রী, বড় ভাই ও দুই মামা আসেন লাশ শনাক্ত করতে। মামার কোলে শিশু দুটিকে রেখে ভেতরে লাশ শনাক্ত করতে যান তারা। কিন্তু পারেনি লাশ শনাক্ত করতে। প্রায় আধাঘণ্টা পর মর্গ থেকে বেরিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। বড় ভাই হাফিজ আহমেদ যেন বাকরুদ্ধ। সন্তানের কাছে আসতেই মায়ের কান্না বেড়ে যায় দ্বিগুণ। মায়ের কান্নায় উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠে সন্তান দুটি। 

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন কাউসারের মা ও স্ত্রী। কাউসাররা চারজন মিলে দিয়েছিলেন এই মেডিকেল সেন্টারটি। দন্ত চিকিৎসক ইলিয়াস সেই চারজনের একজন। তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় ভেতরে ছিল কাউসার। সেসময় ক্লিনিকের গেট বন্ধ ছিল। খোলা থাকলে হয়তো বেরিয়ে আসতে পারতো সে। কাউসারের শ্যালক জাকির হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় ক্লিনিকে ইমতিয়াজ ও আশরাফুল নামে দুই দন্ত চিকিৎসক ও একজন রোগী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ক্লিনিকে আগুন লাগার পর আর কেউ বের হতে পারেননি। 

কোন মন্তব্য নেই