উন্নত এশিয়া গড়তে ৫ ধারণা পেশ প্রধানমন্ত্রীর - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

উন্নত এশিয়া গড়তে ৫ ধারণা পেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষে পাঁচটি ধারণা পেশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায়, যা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর জন্য একটি উদাহারণ হতে পারে। খবর বাসসের 



প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত নিক্কেই সম্মেলনে যোগদান করে তার মূল প্রবন্ধে একথা বলেন। নিক্কেই সম্মেলনের শিরোনাম হচ্ছে ‘এশিয়ার ভবিষ্যত’।

সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশৃঙ্খলা দূর করে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা চাই।’ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথীর মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে সম্মেলনে যোগদান করেন।

এশিয়ার নেতৃবৃন্দের সামনে একটি সমৃদ্ধ এশিয়া গড়ে তোলার জন্য পাঁচটি ধারণা উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে বাস্তবে রূপদান করতে সরকার হিসেবে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করেছি এবং এ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত ব্যক্ত করার জন্য এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।



প্রথম ধারণায় তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং সংঘাতে পরিপূর্ণ। তাই, আমাদের বৃহৎ উদারতায় বিশ্বকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলো যৌথভাবে মোকাবেলা করা, স্বচ্ছতা ও ন্যায় বিচার সুরক্ষা করা এবং উদ্ভাবনী ধারনা এবং পদক্ষেপের ব্যবহার করে সহযোগিতার নতুন উদ্দীপনা জোরদার করা।

প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় ধারণায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দলগত কর্মকাণ্ডকে অতিক্রম করে অর্থনীতিকে উদ্ভাবনী চর্চার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মানের ওপর ভিত্তি করে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে, জনগণের লাভের জন্য এবং সাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান সুবিধাজনক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

তৃতীয় ধারণায় তিনি বলেন, এশীয় দেশগুলোকে খোলা মন নিয়ে পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে, সমতা, অংশীদারিত্ব এবং যৌথ অনুদানের ভিত্তিতে।

চতুর্থ ধারণায় শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়নের ওপর এশিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, আমাদের সংঘবদ্ধভাবে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। সে জন্য আমরা একটি গোত্রবদ্ধ হয়ে দলগত ভাবে বিশ্বশান্তি এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি, যার লক্ষ্য হবে একটি বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর যথাযথ অধিকার এবং স্বার্থকে সংরক্ষণ করা।

যোগাযোগ সম্পসারণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা যোগাযোগ ব্যবস্থারই একটি গতিশীলতা যেটি বিশ্বজুড়ে শান্তি এবং সমৃদ্ধির ভিত রচনা করেছে। অবকাঠামো, মুক্ত বাণিজ্য এবং সহজ বিনিয়োগ এশিয়ার উন্নয়নের ভিত্তি।

তিনি বলেন, আমরা অফুরন্ত সম্পদ এবং সম্ভাবনা দেখেছি, জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাপক সংখ্যক জনগণের শিক্ষা লাভের সুযোগ, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, অতি দারিদ্রের হার এমন একটি পর্যায়ে নামিয়ে আনা যা এক সময় কল্পনা করাও কঠিন ছিল।



রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা কেবল মানবিক আবেদনেই সাড়া দেইনি, আমরা সমস্যাটির ব্যাপারে সচেতন ছিলাম যাতে এই সমস্যাটি এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চরম উত্তেজনা ও সংকটের মুখেও বাংলাদেশ দ্বন্দ্ব নিয়ে সংলাপ ও ঐকমত্য চেয়েছিল।

তিনি বলেন, এটি আমাদের অঞ্চলের এবং বিশ্বের জন্য সংকটময় মুহূর্তে শান্তির শক্তি, মানবতা এবং উন্নয়নের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা এবং দ্বন্দ নিরসনের একটি পাঠ ছিল।

বিশ্বকে শান্তির পথে ধাবিত করার জন্য এশীয় নেতৃবৃন্দকে নেতৃত্ব প্রদানের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা এবং শুভ শক্তির বিজয় অনিবার্য।

তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, উদীয়মান এশিয়া, উদ্ভাবন, আকুল আকাঙ্খা ও নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকে অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সুবিধার্থে শান্তি ও অগ্রগতির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সবসময়ই জোরদার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। একটি বহুমুখী বিশ্বের মধ্যে, আমরা জাতিসংঘের সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং সকল দেশের জন্য বহু-পক্ষীয়তা জোরদার করার চেষ্টা করব। 

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কিভাবে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় এবং কিভাবে বহুমুখী বাণিজ্য শাসনের মধ্যে সুরক্ষাবাদ নিয়ে কাজ করা যায় সে বিষয়ে এই নিক্কি ফোরাম প্রস্তাব পেশ করবে।

বিশ্বের ভবিষ্যৎ মানবতার সাধারণ স্বার্থে একত্রিত হওয়ার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী এক সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল ও টেকসই বিশ্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সকল বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।



তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিস্ময় মানব সভ্যতার উচ্চতর উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য বহুবিধ ক্ষমতার পরিপূরক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানব সভ্যতা যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং প্রকৃতির রুদ্র রূপ প্রত্যক্ষ করেছে।

তিনি বলেন, আমি আস্থা রাখি যে, এখন আমাদের যে বিপদজনক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে, তা অবশেষে শক্তিশালী, যুক্তিসঙ্গত ও দয়িত্বশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে এবং দেশগুলির মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফল তৈরি করবে।

স্বাধীনতার পরে বাংলদেশকে জাপানের স্বীকৃতি প্রদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই স্বাধীনতা অর্জনের সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান একটি বিশেষ সম্পর্কে আবদ্ধ এবং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

মূল প্রবন্ধের শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের যেকোন খাতে জাপানের যে কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা এবং বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।

দেশের সার্বিক উন্নয়নে গত দশ বছরে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা গত একদশকে গড়ে ৬.৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি এবং গত তিন বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণের সকল শর্ত ইতোমধ্যেই পূরণ করেছে এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ায় আমি আস্থাশীল যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শিগগিরই ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে। 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা সকল নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এছাড়াও সম্পদের বণ্টন নিশ্চিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন এবং এজন্য কৃষিখাতের আধুনিকায়ন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি।



তিনি বলেন, আমাদের ছোট ভূখন্ড, তবুও ১৬২ মিলিয়ন লোকের খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমরা পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছি।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপান্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ একটি অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। আমাদের নারীরা শুধু উদ্যেক্তা হিসেবেই নয়, প্রতিরক্ষা, কূটনীতি এবং রাজনীতির মতো অপ্রচলিত খাতেরও নজির স্থাপন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও মেয়ে শিশুদের শিক্ষায় আমরা বিপুল বিনিয়োগ করেছি, এর ফলে নারীরা সমাজের প্রতিটি খাতে এগিয়ে রয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় ৪০ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের নীতি সহায়তার কারণে শিল্পকারখানা বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ ও সিরামিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যা দেশে শিল্পের ভিত্তি সম্প্রসারণে ও নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে।



বেসরকারী খাতকে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তশিপ এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনসহ সারাদেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছি। আইসিটি খাতে উন্নয়নের জন্য আমরা একাধিক শিল্প পার্ক তৈরি করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার। বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে আইনি সুরক্ষা। ট্যাক্স সুবিধা ও মেশিনারি আমদানীতে শুল্ক রেয়াদ সুবিধা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে শতভাগ মূলধনের প্রস্তাব দিয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তাদের লভ্যাংশ এবং মূলধন ফেরত নিয়ে যাওয়ার নিশ্চিয়তা দিয়েছে।



তিনি বলেন, ইইউ, কানাডা এবং জাপানসহ বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় মার্কেটে আমরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করছি এবং এ সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভোগ করতে পারবে। আমরা এ ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।

কোন মন্তব্য নেই