নোবিপ্রবি উচ্চশিক্ষায় অনুসরণীয় একটি প্রতিষ্ঠান
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠন এবং উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পাস হয় 'নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১'। পরবর্তীকালে ২০০৬ সালে চারটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক এবং ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। কালের পরিক্রমায় নোবিপ্রবির অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য নিয়োগের আগে ১৪টি বিভাগে মোট শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ১০২ জন (পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক ৫ জন) এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৯ এবং ২০০ জন। প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ সংকট, বিভাগীয় অফিস কক্ষের অভাব এবং মাত্র চারটি বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগগুলোতে কোনো ল্যাব সুবিধা ছিল না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসিক থাকারও তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
২০১৫ সালের ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা, সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নোবিপ্রবি এখন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ এবং দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। যার মধ্যে ড. এম অহিদুজ্জামানের সময়কালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে চারটি অনুষদ, ১৪টি বিভাগ এবং দুটি ইনস্টিটিউট। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৩৫১ জন (অর্ধশতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী) এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১১৯ ও ৪৮০ জন। বাংলাদেশের সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ইতিহাস এবং সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সমন্বয়ে তিনিই প্রথম উচ্চশিক্ষা স্তরে 'বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ' নামে এক স্বতন্ত্র ডিসিপ্লিন চালু করেন।
এ ছাড়া তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য 'স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস' নামক কোর্সটি বাধ্যতামূলক করেন, যা পরবর্তীকালে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক কোর্স হিসেবে চালু করা হয়। তিনি শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোবিপ্রবিতে 'শিক্ষা বিজ্ঞান' নামে এক স্বতন্ত্র ফ্যাকাল্টি স্থাপন এবং 'লোকপ্রশাসন'-এর মতো 'শিক্ষা প্রশাসন' নামে এক স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করেন, যা দেশের শিক্ষার সার্বিক গুণগত মান নিশ্চিতকরণে সহায়তা করবে বলে তিনি আশাবাদী।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চেক প্রজাতন্ত্র এবং তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। জাপানের Kyushu University-এর সহযোগিতায় নোবিপ্রবি তৈরি করবে স্যাটেলাইট রিসার্চ স্টেশন। বৈশ্বিক পরিবর্তনের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২১০০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নযোগ্য 'ডেল্টা প্ল্যান'-এ দেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উপকূলের ৭৭৮ একর জমির ওপর শেখ হাসিনা সমুদ্রবিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট' প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন ড. এম অহিদুজ্জামান।
শিক্ষা ও গবেষণার চাহিদাকে মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তার সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি হল, চারতলাবিশিষ্ট একটি আধুনিক গ্রন্থাগার, অডিটোরিয়ামসহ চঞ্চম তলা বহুমুখী ভবন, ১০ তলা একাডেমিক ভবন, পঞ্চম তলা প্রশাসনিক ভবন এবং তিন তলা ভিআইপি গেস্ট হাউস। এ ছাড়া বাস্তবায়নাধীন ও নির্মাণাধীন রয়েছে- ১০ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশের সর্ববহৎ তৃতীয় একাডেমিক ও ল্যাব ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা টাওয়ার, ১০ তলা বিশিষ্ট হাউজ টিউটর ও প্রভোস্ট টাওয়ার, ১০ তলাবিশিষ্ট স্টাফ টাওয়ার, তিন তলাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় এবং বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট ভবন।
তার অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাবাদের কারণে সম্প্রতি জাপান সফরকালে জাপানের অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধ সংগঠন 'তকুরঞ্জি বুড্ডিস্ট সোসাইটি' তাকে 'তকুরঞ্জি এশিয়ান বুড্ডিস্ট পিস অ্যাওয়ার্ড-২০১৯' পদক প্রদান করে, যা 'দি ফ্রেন্ড অব হিউম্যানিটি' পদক নামে পরিচিত। আশা করি, তার নিরলস প্রচেষ্টা, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা এবং সুযোগ্য নেতৃত্বে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হবে।
কোন মন্তব্য নেই