করোনায় উদ্বিগ্ন ব্যাংকিং খাত, শাখায় শাখায় চিঠি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

করোনায় উদ্বিগ্ন ব্যাংকিং খাত, শাখায় শাখায় চিঠি












বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে শাখায় শাখায় চিঠি পাঠিয়ে সতর্কতা জারি করছে ব্যাংকগুলো। টাকা পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কাশি ও হাঁচি দেওয়ার ক্ষেত্রে এসেছে রুমাল অথবা টিস্যু ব্যবহার করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করার নির্দেশনা। এমনকি জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত কর্মকর্তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ১৪ দিনের ছুটি বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি সব শাখার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে সোনালী ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়- সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ঠান্ডার মতোই এই ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এটা থেকে বাঁচতে ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন এর নির্দেশনা দেওয়া হল।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেবা দিয়ে থাকে। ফলে প্রতিদিন সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের ভিড় লেগেই থাকে। বিভিন্ন স্তরের লোকজন শাখার ভিতরে প্রবেশের ফলে শাখার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এছাড়া ব্যাংকের ক্যাশ সেকশনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি কাজ করেন তাদেরকে প্রতিদিন অনেক ময়লা কাগজ হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। অনেক সময় মুখের থুতু দিয়ে নোট গণনা করে থাকেন কর্মকর্তারা। পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষণা সূত্রে জানা যায় কাগজের মুদ্রা ও ধাতব মুদ্রায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় নিম্নোক্ত নির্দেশনাবলী জারি করা হলো-

ক. ক্যাশ সেকশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা টাকা গণনার সময় মুখের থুথু নিবেন না। ওয়াটার স্পঞ্জ ব্যবহার করুন।

খ. ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপরই অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ. টাকা গণনার পরপরই চোখ নাক ও মুখে হাত দেওয়া যাবে না।
ঘ. মুদ্রা নাড়াচাড়ার পূর্বে গ্লাভস পড়ে নিতে হবে।

ঙ. জীবাণু নিরাময়ের জন্য শাখার ভল্ট ও ক্যাশিয়ারের ক্যাশ ড্রয়ারসহ সর্বত্র অ্যালকোহল ভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

চ. কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু অথবা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নিবেন। সেই টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে নিজের হাত স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করবেন। পরবর্তীতে ডাস্টবিনের ময়লা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ছ. গ্রাহকদের সেবা প্রদানের সময় কিছু দূরত্ব বজায় রাখুন। এক্ষেত্রে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
জ. গ্রাহকদের অতিরিক্ত ভীড় এড়াতে যার যার দেশ থেকে দ্রুত সেবা প্রদান করবেন।






ঝ. অসুস্থ অবস্থায় ব্যাংকে আসার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মাস্ক পরিধান করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংকে নোটিশ টানানো যেতে পারে।

ঞ. শাখা অথবা অফিসের ভিতরে ময়লা আবর্জনা যাতে না থাকে সে লক্ষ্যে নিয়মিত অ্যালকোহল ভিত্তিক জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ট. অফিসে দাপ্তরিক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার কম্পিউটার স্টেশনারিজ ইত্যাদি জিনিস পত্রাদি পরিষ্কার করার জন্য অ্যালকোহল ভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।

ঠ. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য ঘনঘন সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ড. অফিসের ভিতরে পশুপাখির অবস্থান পরিহার করতে হবে।

ঢ. কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সর্দি, কাশি অথবা জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে ন্যূনতম ১৪ দিনের ছুটি দিতে হবে।






খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সোনালী ব্যাংকই নয় সবগুলো ব্যাংকই আভ্যন্তরীণভাবে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা চিঠি আকারে শাখাগুলোতে পাঠিয়েছে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী এবং জনতা ব্যাংক।

গতকাল বুধবার (১৮ মার্চ) প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হাঁচি, কাশি এবং অন্যান্যদের সংস্পর্শে না আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখার কর্মকর্তাদের জোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে হাতের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসে দেশেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। একজন মারাও গেছেন। মহামারি প্রাণনাশক এ সংক্রামক থেকে বাচঁতে কর্মীদের বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাহিরের অনেক লোক বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসেন। তাদের মাধ্যমে যেন এ ভাইরাস না ছড়ায় সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল প্রবেশ গেটে হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই