ভোক্তা অধিকারে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
দেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ৫ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে।
এই বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ হাজার অভিযোগ তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে অনেকগুলোর মীমাংসাও করেছেন। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আলোচিত ই-কমার্স ইভ্যালির বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠার ৩ বছর না যেতেই তাদের বিরুদ্ধে ৫ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে।
তিনি বলেন, এত অভিযোগ এখন আমরা হিসাব করার সময় পাচ্ছি না। প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিযোগ জমা পড়ছে।
অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের ২/৩ মাস পরও পণ্য বুঝে না পাওয়া নিয়ে। এর বাইরে ‘চেক ডিজঅনার’ হওয়া, ‘রিফান্ডের’ টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গ্রাহকের অভিযোগ, টাকা নিয়ে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পেন্ডিং, কনফার্ম, প্রসেসিং, পিকড, শিপড, ডেলিভার ও রিসিভড ইত্যাদি নানা স্তর সাজিয়ে সময় ক্ষেপনের ব্যবস্থা রেখেছে ইভ্যালি।
এর মধ্যে ‘পিকড’ এর মানে হচ্ছে বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্যটি ইভ্যালি গ্রহণ করেছে, এখন শুধু ডেলিভারি দেওয়ার প্রক্রিয়া বাকি।
ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করতে আসা বাপ্পী নামের একজন ইভ্যালি গ্রাহক বলেন, “গত জুন থেকে আমার পণ্য পিকড হয়ে আছে। এখনও বুঝে পাইনি। দুটি মোটর সাইকেলের তালা অর্ডার করেছিলাম। এগুলো আর পাব বলে মনে হচ্ছে না।”
লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ইভ্যালি থেকে ১০ লাখ টাকার পণ্য কেনার পর আরও কিনতে প্রলুব্ধ হন। তিনটি আইডি তৈরি করে ইভ্যালির নিয়মিত ক্রেতা বনে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর নিজের ১০ লাখ টাকা এবং আত্মীয়-স্বজন থেকে আরও ২০ লাখ টাকা নিয়ে মোট ৩০ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করেন তিনি। কিন্তু মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ৭০টি অর্ডার এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নাসিরের। তাই অভিযোগ নিয়ে এসেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে ১০টি, ফাল্গুনিশপের বিরুদ্ধে ৫৯৯টি (৪৩৫টি মীমাংসিত), প্রিয়শপের বিরুদ্ধে ৫৬২টি (৪১৩টি মীমাংসিত) অভিযোগ জমা পড়েছে ভোক্তা অধিকারে অধিদপ্তরে।
পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দারাজের বিরুদ্ধে ১০১৯টি (৯৪৫টি মীমাংসিত), সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে ৯৩টি (৮৫টি মীমাংসিত), আজকের ডিলের বিরুদ্ধে ১৭৭টি (১৬৫টি মীমাংসিত), ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে ২৬১টি (২২৫টি মীমাংসিত), চালডালের বিরুদ্ধে ১৮৩টি (১৬২টি মীমাংসিত) জমা পড়ে অধিদপ্তরে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ১৬টা কোম্পানিকে নোটিস দিয়েছি বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে। তাদের অধিকাংশই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। অচিরেই ৮/১০টি কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করব আমরা।”
তিনি বলেন, ইভ্যালি একটি ‘ভুল মডেল’ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে এবং তা দেখে গত ছয় মাসে আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান সেই পথ ধরায় এধরনের আর্থিক জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের সমাধান কীভাবে হচ্ছে- প্রশ্নে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু সাহা বলেন, “আমরা আমাদের সামান্য লোকবল নিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
কোন মন্তব্য নেই