হাইড্রোজেন বাণিজ্যে বার্ষিক হাজার কোটি ডলারের হাতছানি
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বিশ্ব। বিকল্প জ্বালানির খোঁজে চলছে নানামুখী উদ্যোগ। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের জ্বালানি হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে হাইড্রোজেন। জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতিগুলোর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এ জ্বালানিতে। আগামীতে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোজেনে ভবিষ্যৎ দেখছে উপসাগরীয় দেশগুলো।
নতুন একটি সমীক্ষা বলছে, হাইড্রোজেন উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে উপসাগরীয় জ্বালানি তেলনির্ভর দেশগুলো। এর মাধ্যমে দেশগুলো ২০৫০ সাল নাগাদ বার্ষিক কয়েক হাজার কোটি ডলার আয় করতে পারে। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও দুবাইয়ের কামার এনর্জির যৌথ একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব নীল ও সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সবুজ হাইড্রোজেন উত্পন্ন করা হয়। অন্যদিকে বাষ্প অবস্থায় থাকা মিথেনকে পুনর্গঠন করে উৎপাদন করা হয় নীল হাইড্রোজেন। জীবাশ্মের বিকল্প পরিবহন জ্বালানি হিসেবে বিশ্বজুড়ে হাইড্রোজেনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। শূন্য কার্বন নিঃসরণযোগ্য এ হাইড্রোজেন পরিবর্তিত অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনকে চালিত করতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে শিল্প উৎপাদন খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজের ই-জ্বালানিতে হাইড্রোজেন মিশ্রিত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে উপসাগরীয় দেশগুলো। প্রায় দুই কোটি টন এই হাইড্রোজেন বিক্রি করে যথাক্রমে ৩ হাজার কোটি ডলার ও ৪ হাজার কোটি ডলার আয় হবে।
এদিকে আরো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের অর্থ হলো, উপসাগরীয় দেশগুলো ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায় চাহিদার ৩০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারবে। এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন রফতানির পরিমাণ পাঁচ কোটি টনে উন্নীত হতে পারে। এমনটা হলে এ রফতানি থেকে দেশগুলোর ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়া থেকে যথাক্রমে ৮ হাজার ও ১০ হাজার কোটি ডলার আয় হবে।
উপসাগরীয় তেল রফতানিকারক দেশগুলো এরই মধ্যে জাপানের মতো দেশে নীল হাইড্রোজেন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (অ্যাডনক) টেকসই জ্বালানি বিক্রির জন্য তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে স্বল্প কার্বন হাইড্রোজেন এবং সংশ্লিষ্ট উপকরণগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী বাজার তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও জাপানে এ জ্বালানির তুমুল চাহিদা তৈরি হয়েছে।
রফতানির পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোর অভ্যন্তরেও হাইড্রোজেনের বড় বাজার তৈরি হচ্ছে। কারণ প্রতিটি দেশই কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর পথে হাঁটছে। স্বল্প কার্বন হাইড্রোজেন দেশীয় শিল্প থেকে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর এবং নতুন রফতানি প্রবাহ তৈরির বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সরাসরি হাইড্রোজেন কিংবা হাইড্রোজেন-চালিত শিল্প উৎপাদন যেমন অ্যামোনিয়া, প্লাস্টিক, সিন্থেটিক জ্বালানি ও ইস্পাত রফতানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি তেলের বাইরে অন্যতম বড় কোম্পানি এমিরেটস স্টিল উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে চাইছে। ইস্পাত উৎপাদনে কয়লার পরিবর্তে জায়গা দখল করছে হাইড্রোজেন।
এরই মধ্যে হাইড্রোজেন উৎপাদন শুরু করেছে অ্যাডনক। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আল জাবের একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, অ্যাডনক বছরে প্রায় তিন লাখ টন হাইড্রোজেন উৎপাদন করছে। আমাদের বিদ্যমান গ্যাস অবকাঠামো এবং কার্বন ক্যাপচার ও সংরক্ষণ ক্ষমতাগুলো কাজে লাগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত উদীয়মান নীল হাইড্রোজেন বাজারে একটি বড় সরবরাহকারী হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই