অদাবীকৃত লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিমত
সভাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় ব্যাংক কোম্পানি আইনানুসারে, ব্যাংক হিসাবে থাকা নগদ আমানতের অর্থ যদি ১০ বছর পর্যন্ত অদাবীকৃত থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনানুসারে এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠিয়ে দেবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ অর্থ পাঠানোর পর দুই বছরের মধ্যে যদি কোনো দাবি উত্থাপিত না হয় তাহলে এ অর্থের ওপর কারো দাবি থাকবে না এবং সেটি সরকারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ অর্থ তখন সরকারের কাছে ন্যস্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইনের এ বিধানের উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিএসইসির গঠন করা পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অদাবীকৃত নগদ লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অদাবীকৃত এ নগদ লভ্যাংশের অর্থ ব্যাংক হিসাবে নগদ আমানত হিসেবে জমা থাকে। ফলে ব্যাংক কোম্পানি আইনানুসারে এ অর্থ সংশ্লিষ্ট হিসাবধারীর অনুমোদন ছাড়া অন্য কোথাও স্থানান্তরের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য, অদাবীকৃত লভ্যাংশের অর্থের মালিকানা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী ও ব্যাংক হিসাবধারীরই থাকবে। এক্ষেত্রে আমরা কোনো মালিকানা নিচ্ছি না। শুধু কাস্টডিয়ান হিসেবে যতদিন পর্যন্ত এ অর্থের মালিকানা অদাবীকৃত থাকবে ততদিন সেটি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার কাজে ব্যবহার করা হবে। যখন এ অর্থের প্রকৃত দাবিদার ফিরে আসবে কিংবা তার উত্তরাধিকারীরা উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে এ অর্থ নিয়ে যেতে পারবেন। বিষয়টি সভায় আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আরো আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া সভায় কোম্পানির পুঞ্জীভূত ক্ষতি ও লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ আইনের বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এ নীতিমালার বিষয়ে সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। গ্রিন বন্ড নীতিমালার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।
এদিকে সমন্বয় সভায় বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্যাংকের টিয়ার-১ মূলধনকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেহেতু এটি মূলধনের অংশ, তাই এটিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা সমীচীন হবে না বলে মনে করছে বিএসইসি। সিকিউরিটিজ আইনানুসারে পর্ষদ সভায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেটি মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন লভ্যাংশ ঘোষণার পরপরই মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে সেটি প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের আগ পর্যন্ত এটিকে মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কিন্তু বিএসইসি জানিয়েছে, পর্ষদ সভায় ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশের সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরিচালকরা সংশ্লিষ্ট থাকেন। যেহেতু ঘোষিত লভ্যাংশের তথ্যও তাদের জানা, সেহেতু যদি এজিএম অনুমোদনের পর লভ্যাংশের তথ্য মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করা হয় তাহলে ব্যাংকের পরিচালকরা এর অনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ পাবেন। চাইলেই তারা লভ্যাংশ ঘোষণার পর ব্যাংকের শেয়ার কিনে রাখতে পারেন এবং এজিএমের পর লভ্যাংশের প্রভাবে শেয়ারদর বাড়লে বেশি দামে শেয়ার বিক্রির সুযোগ পাবেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এক্ষেত্রে পর্ষদ সভার পরই মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের বিষয়ে মত দিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
কোন মন্তব্য নেই