রপ্তানি-বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনায় বাংলাদেশ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

রপ্তানি-বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

 

কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাল্টা শুল্ক। শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। এতে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। অপরদিকে প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর বুধবার নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দেশটির ওপর মার্কিন শুল্কভার ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চীনের ওপরও আরোপ করা হয়েছে ৫৪ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। মার্কিন এ পাল্টা শুল্কের তালিকায় বাকি প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায়ও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

এর ফলে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কা যেমন কেটেছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদার পতন ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। তবে সেটি সব দেশের বেলায়ই প্রযোজ্য হবে। সুতরাং সেখানে বাংলাদেশের আলাদা করে দুশ্চিন্তা নেই। বরং প্রতিযোগী অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকায় বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ারও সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বাংলাদেশকে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বাড়তি শুল্কের প্রভাবে মার্কিন বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়বে এবং এতে চাহিদার অবনমন ঘটতে পারে। তারপরও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায়; বিশেষ করে ভারত ও চীনের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকায় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ পাকিস্তান, ভিয়েতনামও নিতে চাইবে। সেখানে এগিয়ে থাকতে আমাদের উৎপাদনশীলতা, শ্রমিকের দক্ষতা ও ব্যবসার পরিবেশকে আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের পণ্যের মূল্যে কীভাবে এগুলোর প্রতিফলন ঘটাতে পারি, সেদিকে নজর দিতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানির পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এখনই যে বিনিয়োগ বাড়বে তা নয়। এ জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। শুল্ক ওঠানামা করতে পারে। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করেন। তারা সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। আমরা যদি বেশি সময় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারি, তাহলে বিনিয়োগের জন্য ভালো।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন পাল্টা শুল্কহার নিয়ে আমরা যে ‘মহাবিপদে’ ছিলাম, সেটা এখন ‘সুযোগে’ রূপ নিয়েছে। ভারত ও চীনের ওপর অনেক হারে শুল্কারোপ হয়েছে। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। সুযোগের শতভাগ সুবিধা নিতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে, সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সক্ষমতা বলতে উৎপাদন, সরবরাহ ও বন্দরের গতি বাড়াতে হবে। শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে হবে। এসব করতে না পারলে সুযোগ হাতছাড়া হবে।

গত ৩১ জুলাই ওয়াশিংটন সময় বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন শুল্কহার ঘোষণা করা হয়, যা গতকাল ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৬৭টি দেশের জন্য শুল্কহার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। নতুন আদেশ অনুযায়ী, দেশভেদে শুল্কহার ১০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ নির্ধারণ হয়েছে।

এর আগে গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। পরে তা ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করে এ শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

ভারতের ওপর এ শুল্কহার ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর চীনের ওপর আরোপ করা হয়েছে ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকার ওপর ২০ শতাংশ আরোপ হয়েছে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ হয়েছে। আর যেসব দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করা হয়নি, তাদের ওপর ভিত্তিগত (বেজ লাইন) ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিটিআরআই বলেছে, এই শুল্কের ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম আরও অনেকটা বেড়ে যাবে। এর প্রভাবে রপ্তানি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। তার পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ভারত। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অন্য সব খরচ অপরিবর্তিত থাকলেও শুধু শুল্কের কারণে চীন ও ভারতের বদলে বাংলাদেশ থেকে একই পণ্য আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের খরচ কমবে ৩০ শতাংশের মতো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সুযোগটা বাংলাদেশের নেওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যেখানে তৈরি পোশাকের রপ্তানিই বেশি। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কথা হলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, মার্কিন এ পাল্টা শুল্কের ফলে সাময়িকভাবে ব্যবসা কমতে পারে। কিন্তু শুল্কের যে হার নির্ধারণ হয়েছে তাতে স্বস্তির পাশাপাশি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। প্রতিযোগী দেশ পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের পাল্টা শুল্ক ১ শতাংশ বেশি হলেও ভারত ও চীনের চেয়ে অনেক কম। আমাদের ধারণা, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়া অব্যাহত থাকবে। তাতে আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।

পাল্টা শুল্কের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি নিয়ে রপ্তানিকারকরা নতুন কৌশল সাজাচ্ছেন বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কীভাবে এ সুযোগের শতভাগ ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো অনুকূলে থাকতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই