একের পর এক অগ্নিকাণ্ড: দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা? তদন্তে উঠছে নানা প্রশ্ন
 
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
 
একের পর এক অগ্নিকাণ্ড: দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা? তদন্তে উঠছে নানা প্রশ্ন
দেশজুড়ে মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে ঘটেছে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এর মধ্যে দুটি আবার ঘটেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়—ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এবং চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড)-এ। একের পর এক এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা—এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে জোর আলোচনা ও বিশ্লেষণ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা এবং এগুলো পূর্বপরিকল্পিত।
বিমানবন্দর ও সিইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে কেপিআই (Key Point Installation) এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে। জানা গেছে, বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিশেষায়িত ইউনিট থাকলেও সেখানে ২০০ সদস্যের একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব ২০১৮ সালে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সিভিল এভিয়েশন অনুমোদন দিলেও রহস্যজনকভাবে পরে তা বাতিল করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ ও সিইপিজেডের আগুন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত নাশকতা। এতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। কেপিআই এলাকায় কেন এমন ঘটনা ঘটবে—তা অবশ্যই তদন্ত করা জরুরি।”
চট্টগ্রামের সিইপিজেডে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আগুন লাগে আমেরিকান কোম্পানি অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির কারখানায়। ভয়াবহ এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ১৭ ঘণ্টা পর। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ভবনের সাত তলায় থাকা গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
এর দুই দিন আগেই রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আনোয়ার ফ্যাশন নামে একটি পোশাক কারখানা এবং শাহজালাল কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনে পুড়ে মারা যান ১৬ জন শ্রমিক। পরে তদন্তে জানা যায়, ভবনটি ছিল অননুমোদিত এবং সেখানে ফায়ার সেফটি সনদও ছিল না।
নিরাপত্তা ঘাটতি ও প্রশাসনিক গাফিলতি
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক (অপারেশন্স) মেজর (অব.) শাকিল নেওয়াজ বলেন, “২০১৮ সালে বিমানবন্দরে ফায়ার স্টেশনের প্রস্তাব অনুমোদনের পরও বিমান বাহিনীর আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এয়ারপোর্টে অগ্নি নিরাপত্তা যথাযথ থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা হওয়ার কথা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “অগ্নি নিরাপত্তা টিম কি কাজ করেছে? আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল কেন? কী ধরনের দ্রব্য ছিল সেখানে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। কারণ, বিমানবন্দর একটি কেপিআই—এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত।”
অতীতের ঘটনাগুলোও প্রশ্নের মুখে
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুনে ছাই হয়ে যায় বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি। তখন তদন্ত কমিটি বলেছিল, ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট’ থেকে আগুনের সূত্রপাত। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, প্রকৃত কারণ এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি।
এর আগে গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকায় ফেমাস কেমিক্যালস লিমিটেডে আগুনে চারজনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন ফায়ার ফাইটার।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারি ও বেসরকারি সব ভবনে নিয়মিত ফায়ার ড্রিল সম্পন্ন করতে হবে এবং ফায়ার সেফটি সনদ আছে কি না তা যাচাই করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “ভবন নির্মাণ ও ফায়ার সেফটি তদারকিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে, নইলে এ ধরনের আগুন বারবার ঘটবে।”
কোন মন্তব্য নেই