বিদ্যুৎ খাতে সংঘবদ্ধ দুর্নীতির প্রমাণ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বিদ্যুৎ খাতে সংঘবদ্ধ দুর্নীতির প্রমাণ: সরকারের চুক্তি পর্যালোচনা কমিটির বিস্ফোরক প্রতিবেদন
টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত সরকারের সময় সংঘবদ্ধ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির নামে ব্যবসায়ীদের ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রকৃত বিদ্যুৎ সরবরাহের চেয়ে দুর্নীতিই ছিল মুখ্য। কমিটির মতে, এটি সরকারের অদক্ষতা নয়—বরং পরিকল্পিত দুর্নীতির ফল।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ:
রোববার (২ নভেম্বর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। এতে বলা হয়, গত দেড় দশকে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, কিন্তু খরচ বেড়েছে ১১ গুণ—যা অস্বাভাবিক। কমিটির মতে, ২০১০ সালে প্রণীত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন (দায়মুক্তি আইন) দুর্নীতির সুবিধা দিতেই ব্যবহার করা হয়েছে।
মূল অনুসন্ধান:
-
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোকে “ভাড়া আদায়ের নিরাপদ বিনিয়োগ” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
-
চুক্তিতে ব্যবসায়ীদের কোনো ঝুঁকি ছিল না, সব ঝুঁকি সরকারের ওপর চাপানো হয়।
-
জ্বালানি আমদানি ও বিল পরিশোধ প্রক্রিয়াতেও বহুমাত্রিক দুর্নীতি হয়েছে।
-
সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কার্যালয় এবং দুই প্রাক্তন মুখ্য সচিব—আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
কমিটির সদস্যদের বক্তব্য:
কমিটির সদস্যদের মতে, “চুক্তিগুলো শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং একটি সংগঠিত দুর্নীতির নেটওয়ার্ক।” তাঁরা বলেন, সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যত বিল পরিশোধ করেছে, তার সঙ্গে উৎপাদিত বিদ্যুতের হিসাব “আইনস্টাইনও মেলাতে পারবেন না।”
আদানির চুক্তিতেও অনিয়মের প্রমাণ:
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তিতেও অনিয়ম পাওয়া গেছে। কমিটি এ বিষয়ে আলাদা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আদালত ইতিমধ্যে রিট মামলায় এ প্রতিবেদন চেয়েছে।
দুর্নীতির প্রভাব ও ক্ষতি:
কমিটির সুপারিশ:
-
চুক্তিগুলোর অনিয়মে দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) তদন্তের পরামর্শ।
-
ভবিষ্যতে কোনো চুক্তি করার আগে স্বাধীন কমিশনের যাচাই বাধ্যতামূলক করা।
-
দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিলের সুযোগ রাখার সুপারিশ।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জানুয়ারির মাঝামাঝি জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তাতে অনিয়ম, দায়ী ব্যক্তিদের নাম ও ক্ষতির পূর্ণ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ:
এই প্রতিবেদনের ফলাফল বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘদিনের “অদৃশ্য লুটপাটের চিত্র” স্পষ্ট করেছে। বিশেষ বিধান আইনের আশ্রয়ে গৃহীত একের পর এক দরপত্রবিহীন চুক্তি দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যদি দায়ীদের বিচারের আওতায় না আনা যায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই