আরব বিশ্বে দরকার অবাধ বাকস্বাধীনতা
সম্প্রতি আমি অনলাইনে ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত ২০১৮ সালের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি খুঁজছিলাম। ফলে আমার মধ্যে গভীর একটি উপলব্ধি এসেছে।বিশ্বে আরব দেশগুলোর মধ্যে একটি মাত্র দেশ আছে, যাকে স্বাধীন বলা যেতে পারে। দেশটি হচ্ছে তিউনিশিয়া। আংশিক স্বাধীন হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জর্ডান, মরক্কো ও কুয়েত।
বাকি দেশগুলো ‘স্বাধীন নয়’ বলেই বিবেচিত।ফলে এসব আরব দেশে যারা বসবাস করছেন তারা হয় অজ্ঞ, না হয় তারা ভুল তথ্যের মধ্যে রয়েছেন। তারা অনেক বিষয় নিয়েই প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারেন না।যেসব বিষয় দেশ ও নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনকে প্রভাবিত করছে, সেসব বিষয় নিয়েও তারা মুখ খুলতে পারেন না। রাষ্ট্র পরিচালিত মাধ্যমগুলো জনগণের মানসিকতাকে গুরুত্ব দেয় না।
যদিও অনেকেই বিশ্বাস করেন না। কিন্তু একটি বৃহৎ অংশ অনেক সময়ই মিথ্যা তথ্যের শিকার হন। দুঃখজনক হল, এ অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।২০১১ সালের আরব বসন্তে দেশগুলো আশার বীজ বুনেছিল। সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল যে, তাদের দেশগুলোতে উজ্জ্বল ও স্বাধীন আরব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সরকারের কর্তৃত্ব, অবিচল হস্তক্ষেপ ও তথ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রত্যাশা জেগেছিল সাধারণ মানুষের। তাদের এই প্রত্যাশা বিফলে যেতে সময় লাগেনি।
আরব বিশ্ব তাদের সেই পুরনো ধারায় ফিরে গেল।
পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও কঠোর হতে শুরু করল। সৌদি প্রেসে প্রকাশিত এযাবৎকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলাম লিখেছিলেন আমার বন্ধু ও প্রখ্যাত সৌদি লেখক সালেহ আল শেহি।
দুঃখজনক হলেও সত্যি তাকে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি সৌদির রাজতন্ত্র নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। মিসর সরকার আল মাসরি আল ইয়োম পত্রিকার সম্পূর্ণ মুদ্রণ বাজেয়াপ্ত করেছিল।এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং তীব্র নিন্দার বদলে তা মৌনতায় পরিণত হয়েছে।
কাতার সরকার সব সময়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কভারেজকে সমর্থন করে গেছে। তিউনিশিয়া ও কুয়েতে সংবাদমাধ্যমগুলো কিছুটা স্বাধীনতা পায়।
সেখানে মিডিয়াগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়।তবে বৃহত্তর আরবে কি ঘটছে সেগুলো তারা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে না। সৌদি আরব, মিসর ও ইয়েমেনের সাংবাদিকরা যে প্লাটফর্ম পাচ্ছে তা অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত।
লেবাননেও যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হয় তবে দেখা যাবে, তারা ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রভাবের শিকার। আরবদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার।আরব বিশ্বের একটি আধুনিক সংস্করণ প্রয়োজন, যাতে করে তারা বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। দারিদ্র্য, অব্যবস্থাপনা ও ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমাদের ভুগতে হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই