চট্টগ্রামে বড় তিন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাথে সাথেই গতকাল চট্টগ্রামে তিনটি বড় প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় পাইলিং শুরুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশার এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে এবং কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে চাক্তাই-কালুরঘাট রিভার ড্রাইভ রোড ও বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে সিডিএর নিয়োগ দেয়া পৃথক দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে হালিশহর এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বে টার্মিনাল নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট সাগর উপকূলে জড়ো করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুরুতে সাগর ড্রেজিং করে তোলা মাটি দিয়ে ইয়ার্ড নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকাল ১০টা নাগাদ গণভবন থেকে ২০ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশের ৫৬টি জেলার ৩২১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করেছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রামের তিনটি বৃহৎ প্রকল্পও রয়েছে। গণভবনে অনুষ্ঠান শেষ করার সাথে সাথে বিমানবন্দর সড়কের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় পাইলিং কাজ শুরু হয়েছে। ৩২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রত্যাশার এ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেনকনের প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে নির্মাণ শ্রমিকরা শুরু করেছেন। ১৭ কিলোমিটার লম্বা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে তিনটি পৃথক ভাগে বিভক্ত করে নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে শুরুতে ইপিজেড এবং বন্দর কেন্দ্রিক যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে ফ্লাইওভারের বন্দরইপিজেড অংশ নির্মাণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং অংশ এবং সর্বশেষ সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা অংশ নির্মাণ করা হবে। এতে করে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত টানা ফ্লাইওভারটি এলিভেটেড এঙপ্রেস ওয়ে হিসেবে পরিচালিত হবে।
চট্টগ্রামের বিনিয়োগের দুয়ার খুলে দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের আশায় গৃহীত এলিভেটেড এঙপ্রেস ওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের স্থায়ী অবসান হবে। নগরীর ব্যাপক এলাকা স্থবির হয়ে থাকা কিংবা এয়ারপোর্ট থেকে শহরের মূল কেন্দ্রে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লাগার পরিস্থিতি থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে। মাত্র ২০ মিনিটে শহর থেকে এয়ারপোর্ট পৌঁছা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
গতকাল এলিভেটেড এঙপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় কন্ট্রাক্টর সুলতান নাছির আহমদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘এই এঙপ্রেস ওয়ে নির্মাণে আমার কোনো ক্যারিশমা নেই; সব ক্যারিশমা বঙ্গবন্ধু কন্যার। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা বন্দর সংশ্লিষ্ট কাজে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। দীর্ঘদিন ধরে যানযটে নাকাল বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর ও ইপিজেড সংশ্লিষ্ট পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।’ সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে একের পর এক বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছেন। আজও (গতকাল) তিনটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।’ উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান আবদুচ ছালাম। এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা রাতদিন কাজ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এঙপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজ যাতে শেষ করতে পারি সে চেষ্টা সিডিএর রয়েছে।’
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের পরপরই নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার পেছনে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চাক্তাই কালুরঘাট রিভার ড্রাইভ রোড ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চকবাজারসহ বিস্তৃত এলাকাকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা একটি জনপদকে মূল স্রোতে নিয়ে আসতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার লম্বা এ প্রকল্পে চারলেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধ হিসেবেও সড়কটি কাজ করবে। নিচে ২৫০ ফুট ও উপরে ৮০ ফুট চওড়া এবং ২৪ ফুট উঁচু সড়কটি শহরের আউটার রিং রোডেরও অংশ। সড়কটিতে ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর এবং পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে। যাতে পানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার প্রতিরোধক দিয়ে ঢালু প্রতিরোধ, তীর সংরক্ষণ ও সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৫৫ লাখ ঘন মিটার মাটি ভরাট করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর বিস্তৃত এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। স্পেক্ট্রা কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গতকাল বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘এটি শুধু রাস্তা বা শহর রক্ষা বাঁধই নয়, নগরীর বিস্তৃত এলাকার আবাসন, পর্যটন এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।’
আগামী একশ বছর দেশে বন্দরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের এযাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর হালিশহর উপকূলে সাগরের বুকে জেগে উঠা চর এবং চ্যানেল ব্যবহার করে নির্মিত বে টার্মিনালের ট্রাক টার্মিনাল এবং ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রকল্প এলাকায় জড়ো করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে ড্রেজিং করে মাটি উত্তোলন করে ইয়ার্ড ভরানোর কাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের জন্য দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্রমে বে টার্মিনালের মূল কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়াও চালানো হবে।’ প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি শুধু চট্টগ্রামেরই নয়; দেশের অর্থনীতির সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই