টেক্সির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৫ বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার সময় কমিউনিটি সেন্টারের সামনেই দুর্ঘটনা
সিএনজি টেক্সিতে করে তারা বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন একটি কমিউনিটি সেন্টারে। কমিউনিটি সেন্টারের সামনেই টেক্সিটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে চালক ও শিশুসহ ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রাম
নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় মোহনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। আহতরা হলেন রাউজান উপজেলার কদলপুরের মীর বাড়ির কামরুল ইসলামের স্ত্রী নাজনীন (২৫) ও তার শিশু সন্তান মোহাম্মদ মিকাত (২), একই গ্রামের খালেদের স্ত্রী আমেনা বেগম (৪০), আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (২৫) এবং টেক্সি চালক ও সদরঘাট থানার চেয়ারম্যান ঘাটার আবুল কাশেমের ছেলে মো. ফরিদ (৪০)। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানার এসআই জিয়াউল হক বলেন, সিএনজি টেক্সি নিয়ে বাড়ি থেকে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তারা। এক কিলোমিটার এলাকার মোহনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে
পৌঁছালে টেক্সিটির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে টেঙির যাত্রীরা ও চালক আহত হন। স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা টেঙির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, আহতদের কারো অবস্থা গুরুতর নয়। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা : গত এক বছরের দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রতি মাসে কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ মারা গেছেন। কেন ঘটছে এ ধরনের ঘটনা? কীভাবে এই অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? এ জন্য আসলে কারা দায়ী? সেই বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। দেশে বাসাবাড়িতে এবং বিভিন্ন যানবাহনে যেসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার একটি বড় অংশইই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে।
প্রতিটি সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে দশ থেকে ১৫ বছর। এরপর সেগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হয়। কিন্তু গাড়িতে যেটা ১০ বছর বা ১৫ বছর আগে লাগানো হয় সেটা চলতেই থাকে। একই অবস্থা বাসাবাড়ির বোতল গ্যাসের। সেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।
বাংলাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন তারাই আবার এই সিলিন্ডার পরীক্ষার সনদ দিয়ে থাকেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিলিন্ডারের সমস্যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে সিলিন্ডার বিক্রি করা কোম্পানিগুলো বলছে, অসচেতনতা ও অসতর্কতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা থাকলেও ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গ্রাহকদের সচেতন করার বিষয়েও নেই কোনো কিছু। এমনকি কোম্পানিগুলো যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করছে তারও যাচাই-বাছাই করার সুযোগ কম। এলপি গ্যাস ব্যবহারের নীতিমালা না থাকার কারণে এই সমস্যার কোনো সমাধানও হচ্ছে না।
গত বছরের ২৪ জুন নগরীর বেবি সুপার মার্কেটের সামনে একটি চলন্ত টেঙির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন টেঙি চালক মো. বজলু। দুর্ঘটনার পর টেঙির দুই যাত্রী আবদুল আমিন ও তার ছেলে আবদুর রহিমকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তারা দুজনও মারা যান।
বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদফতর জানায়, রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। বাংলাদেশের বাজারে এখন যেসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার ৮০ শতাংশ বেসরকারি কোম্পানি। বিপিসির সিলিন্ডার ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও সারা দেশে সিএনজিচালিত আড়াই লাখের বেশি যানবাহনের সিলিন্ডার অপরীক্ষিত রয়ে গেছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, এসব সিলিন্ডারের মধ্যে কোনোটিতে ত্রুটি থাকলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালের সিএনজি বিধিমালা অনুযায়ী, পাঁচ বছর পরপর সিএনজিচালিত যানবাহনের সিলিন্ডার পরীক্ষা করা বাধ্যবাধকতামূলক। পরীক্ষায় ত্রুটি ধরা পড়লে নতুন সিলিন্ডার বসাতে হবে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত সারা দেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ তিন হাজার ১৩১টি। এর মধ্যে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫০৬টি যানবাহন সিএনজি ব্যবহারের জন্য রূপান্তরিত। এক লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি টেঙি ও ৪০ হাজার ৩৮৩টি বাহন গ্যাসচালিত বাহন হিসেবে আমদানি করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই